পারিবারিক অশান্তির জেরে আত্মহত্যা গৃহবধূর

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
পারিবারিক অশান্তির জেরে আত্মহত্যা গৃহবধূর



দ্বিগবিজয় মাহালীঃ পরিবারে লাগাতার অশান্তির কারণেই যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হলো এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার সকালে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার ৫ নং সারতা অঞ্চলের চাঁদাগোবরা এলাকায়। এই ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গিয়েছে,মৃত ওই গৃহবধূর নাম তপতী গুছাইত মহাপাত্র। বয়স ২৫ বছর। রামপুরা গ্রামের বাসিন্দা অমল গুছাইতের মেয়ে তপতীর সঙ্গে প্রায় বছর ১২ আগে বিয়ে হয়েছিল একই অঞ্চল চাঁদাগোবরা গ্রামের বাসিন্দা দীপক মহাপাত্রর সঙ্গে। দীপক পেশায় চাষী। তাদের একটি ছয় বছরে পুত্র সন্তানও রয়েছে।

বিয়ের পর সংসার ঠিকঠাক ভাবে চলেও। পরবর্তীতে পরিবারে আসে তুমুল অশান্তি। প্রতিদিনই শ্বশুর-শাশুড়ি সহ ননদ সঙ্গে ওই গৃহবধূর ঝগড়া লেগে থাকত। আর এই লাগাতার অশান্তির জেরে মাঝে বেশ কয়েকবার কখনো বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা,কখনো আবার রেললাইনে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তপতী। এই নিয়ে কয়েকবার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ও স্থানীয়দের নিয়ে সালিশি সভা করা হয়। কিন্তু তাতেও অশান্তি মেটেনি।

পরবর্তীতে গত শুক্রবার বিকেলে স্বামী-শাশুড়ি ননদ সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ। তারপরই শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই গৃহবধূ। সেই সময় প্রতিবেশীদের নজরে আসে যে ঘরের মধ্যে থেকে কালো ধোঁয়ার কুন্ডুলি বের হচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় সাথে সাথেই প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখেন সেখানে দাউ দাউ করে আগুনের মধ্যে জ্বলছে ওই গৃহবধূ।

এরপরই প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা কোনরকম ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। সবং গ্রামীণ হাসপাতলে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনার পর পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

এদিকে গৃহবধূর বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে সবং থানায় শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। খুন নাকি আত্মহত্যা নাকি? অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে সবং থানার পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক করা যায়নি। ওই গৃহবধূর স্বামী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

অন্যদিকে ওই গৃহবধূর বাবা অমল গুছাইত বলেন, আমরা গরীব হওয়ার কারণে মেয়েকে প্রতিদিন জামাই,শাশুড়ি ও ননদ মেনে নিতে পারেননি। তাই প্রতিদিন মেয়েকে অত্যাচার করত। আর এই অশান্তির জেরে এর আগেও কয়েকবার মেয়েকে আত্মহত্যার হাত থেকে আমরা বাঁচিয়েছি। মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে গায়ে আগুন লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। দোষীদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।