সহজে বাঁধাকপির চাষ করুন

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
সহজে বাঁধাকপির চাষ করুন

নিজস্ব সংবাদ্দাতাঃ শ্রাবণ-ভাদ্র থেকে ভাদ্র-আশ্বিন, মধ্যম আশ্বিন-কার্তিক কার্তিক-আগ্রহায়ণ এবং নাবি জাতের জন্য অগ্রহায়ণ-মধ্য পৌষ থেকে পৌষ-মধ্য মাঘ এই সময়কালই হল বাঁধাকপি চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। এবার জেনে নিন সহজে কিভাবে এর চাষ করবেন। প্রথমে গভীর ভাবে ৪-৫টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর বিকেলবেলায় জমিতে রোপণ করতে হবে। তবে সুস্থ ও সবল হলে এক-দেড় মাস বয়সের চারা রোপণ করা যায়। রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি দিলে ভাল হয়। এই হিসেবে প্রতি শতকে ১৫০টির মত চারার প্রয়োজন হয়। আঙ্গিনায় ৫ মিটার লম্বা একটা বেডের জন্য ২০-২২টি চারার প্রয়োজন হয়। বেডে দুই সারিতে চারাগুলো লাগাতে হবে। আঙ্গিনায় লাগানোর জন্য যেহেতু কম চারার দরকার হয় সেজন্য কোন বিশ্বস্ত-নার্সারি থেকেই চারা কিনে লাগানো ভাল। তবে একটা বেডে বাঁধাকপির চারা তৈরি করে অল্পদিনের মধ্যেই তা বিক্রি করে যেমন অধিক লাভবান হওয়া যায় তেমনি নিজের প্রয়োজনও মেটানো যায়। বীজের পরিমাণ জাত ভেদে শতক প্রতি ১.৫-২ গ্রাম দরকার হয়। হেক্টর প্রতি সারে কম্পোস্ট ১২৫ কেজি, ৫০০০-১০০০০ কেজি, ইউরিয়া ৩৫০ কেজি,  টিএসপি, ২৫০ কেজি পটাশ, ২৫০ কেজি সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ২ কিস্তিতে চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর একবার এবং ৩০ -৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পরপর হালকা সেচ দিতে হবে। বাঁধাকপি গাছের সারির মাঝে সার দেওয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দিতে হবে। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন জল বেশি সময় ধরে জমে না থাকে। আগাছা নিধনের জন্য জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। চারা অবস্থা থেকে 'রসুন' গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। অতি বৃষ্টির কারণে জমিতে জল বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি জল সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পোকামাকড়ের জন্য কপির 'লেদা পোকা-সাইপারমেথ্রিন' জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কপির 'কাটুই' পোকার আক্রমণ বেশি হলে 'কারটাপ' জাতীয় কীটনাশক (কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি / ৪ মুখ) অথবা ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি/ ৩ মুখ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। পোকার আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার করতে হবে। মোজাইক ভাইরাস রোগ-জমিতে সাদা মাছি দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। বাঁধাকপির অল্টারনারিয়া জনিত পাতার দাগ রোগ- ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম) ১০ লিটার জলে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে। গোড়া পচা রোগ/ডেমপিং অফ কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রানাশক যেমন, এমকোজিম ৫০; অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি/ ২ মুখ ১০ লি জলে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ বোশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার জলে ২গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ে এবং নির্দেশাবলি মেনে চলতে হবে। ব্যবহারের সময় উপযুক্ত নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করতে হবে। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বাঁধাকপি জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১৫০-১৮০ কেজি। এটিকে ছায়ায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মাঝে জল ছিটিয়ে দিতে হবে কপির ওপর। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখতে হবে।