বাড়ির ছাদই হয়ে উঠতে পারে 'বেদানা বাগান'

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
বাড়ির ছাদই হয়ে উঠতে পারে 'বেদানা বাগান'

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বেদানা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি ''ডালিম ফল'' হিসেবেও পরিচিত। লাল রঙের এক মিষ্টি ফল এটি। শুধু ফল হিসেবেই নয়, ঔষধী গুণও রয়েছে এই ফলের। ছোটছোট দানাযুক্ত এই ফলে রয়েছে আয়রন। যা মানুষের শরীরে রক্তের পরিমাণকে বৃদ্ধি করে ''রক্তাল্পতা'' বা ''অ্যানিমিয়া'' রোগকে নির্মূল করতে পারে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিতে এই ফল খুবই উপকারি। তাই সেই 'ডালিম'ই যদি আপনার বাড়ির ছাদের শোভাবর্ধন করে তাহলে মন্দ হয়না। এই গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করলে সারা বছর এর থেকে ফল পাওয়া যায়। ছাদের বাগানে টবে বা ড্রামে খুব সহজেই ডালিমের চাষ করা সম্ভব। এবং বিক্রির ক্ষেত্রেও তা খুবই লাভজনক হয়ে উঠবে। বেদানার চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি টব বা ড্রাম নিয়ে নিতে হবে। ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় একেবারেই জল জমে না থাকে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে । এবার বেলে-দোআঁশ মাটি ২ ভাগ, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম, পটাশ ৪০-৫০ গ্রাম এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে জল দিয়ে ১০-১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে আলগা করে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন আগের মতো একইভাবে রেখে দিতে হবে।মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি কলমের চারা সেই টবে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় গাছের গোড়া মাটি থেকে কোনভাবে যেন আলাদা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে। যাতে গাছের গোড়া দিয়ে জল বেশি ঢুকতে না পারে । একটি লাঠি বা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে জল অল্প দিলেই চলবে। তবে, কোনোভাবেই যেন গাছের গোড়ায় জল জমে না থাকে। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। চারা লাগানোর আগে ফলন বৃদ্ধির জন্য গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছর গাছে নিয়মিতভাবে সার দিতে হবে। গর্ত করার ৮-১০ দিন পর গর্তের মাটির সাথে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭০ গ্রাম জিপসাম, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম কম্পস্টের গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে হবে | ১ বছর বয়সের গাছে টিএসপি ১২৫ গ্রাম, গোবর ১০ কেজি, পটাশ সার ১২৫ গ্রাম এবং ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি বছরে সারের মাত্রা একটু করে বাড়াতে হবে। পর্যায়ক্রমে পূর্ণ বয়স্ক ১ টি গাছে ১.৫ কেজি ইউরিয়া, ৬০ কেজি গোবর, ১.৫ কেজি টিএসপি এবং ১.৫ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার প্রয়োগ করতে হবে। এই পরিমাণ সার ২ বারে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বারে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ( মে- জুন ) মাসে এবং ২য় বারে আশ্বিন-কার্তিক ( সেপ্টেম্বর- অক্টোবর ) মাসে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ডালিম গাছের গোড়ায় কোন প্রকার যেন আগাছা না লেগে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কারণ, ডালিমের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ না হলে গাছ রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তা সত্ত্বেও গাছ যদি রোগাক্রান্ত হয়, তবে সেই অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম হারে মেনকোজেব (ইণ্ডোফিল এম ৪৫/ ডিইথেন এম ৪৫) বা ১ গ্রাম হারে কার্বান্ডিজম( নোইন/ অটোস্টিন/এমকোজিম) জলে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ২-৩ বার ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। ফলস্বরূপ বাড়ির ছাড-বাগানেই তৈরি হবে বেদানার সারি।