দ্বিগবিজয় মাহালীঃ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার রামজীবনপুর পৌরসভা। ১১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বহু পুরানো এই পুরসভা।২৭ শে ফেব্রুয়ারী রাজ্যের ১০৮ টি পৌরসভার নির্বাচনের সাথে রামজীবনপুর পৌরসভারও নির্বাচন রয়েছে।রামজীবনপুরের কাঁসা পিতল ও তাঁত শিল্পের জন্য বিশেষ পরিচিতি রয়েছে এই রামজীবনপুর পৌরসভার।দশকের পর দশক ধরে বংশপরম্পরায় রামজীবনপুরের কাঁসা পিতল ও তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন শতাধিক পরিবার।এর উপর ভর করেই এই শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির সদস্যদের চলতো জীবন জীবিকা।বর্তমানে রামজীবনপুর পৌরসভার এই দুই ঐতিহ্যের শিল্পের করুন দশা,প্রায় বন্ধের মুখে।একেবারে বলা চলছে ধুঁকছে রামজীবনপুরের বহু প্রাচীন ঐতিহ্যের কাঁসা পিতল ও তাঁত শিল্প।জানাযায়,রামজীবনপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কর্মকার পল্লীতে রয়েছে কাঁসা পিতল শিল্প।এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৯৪০ জন এবং তারমধ্যে এই শিল্পের সাথে যুক্ত কর্মকার পল্লীর পরিবারগুলির ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন।বংশপরম্পরায় চলে আসা এই কাঁসাপিতল শিল্প এখন ধুঁকছে।এই শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগরদের দাবি,আগে এখান থেকে ভিন রাজ্য পাড়ি দিত তাদের জিনিস এখন তা আর হয়না।কাঁসাপিতল তৈরির জন্য প্রয়োজন বিশেষ মাটি আর জ্বালানির জন্য কয়লা,এই দুটি জিনিস পেতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের।রামজীবনপুর পৌরসভার বনডাঙ্গা মৌজায় সরকারি খাস জায়গা থেকে কাঁসাপিতলের জন্য মিলতো মাটি কিন্তু বাম আমলে সেই জমি পাট্টা হিসাবে বিলি করে দেওয়ায় তখন থেকেই মাটির সমস্যায় ভুগছে তারা।পাশাপাশি কয়লার দাম আকাশছোঁয়া তারউপর তার জোগান কম।এই দুই সমস্যার সমাধান পৌরসভায় যেই আসুক তা সমাধান করুক দাবি কারিগরদের।সরকারি ভাবে কোনও স্বীকৃতি বা কোনও অনুদান না মেলায় আক্ষেপ এই শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির।তবে প্রতিবারের মতো এবারও পৌর ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির কোনও খামতি নেই।৬ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নির্মল চৌধুরী অপরদিকে ওই ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কৌশিক আশ।দু'জনেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবার পৌর বোর্ডে তারা ক্ষমতায় এসে আগে এই শিল্প পুনরুদ্ধারে নজর দেবে।
এই কাঁসাপিতল ছাড়াও রামজীবনপুর পৌরসভার ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে রয়েছে বহু পুরানো ঐতিহ্যের তাঁত শিল্প।আগে এই তাঁত শিল্পের সাথে অধিকাংশ পরিবারই যুক্ত ছিল।কিন্তু তাঁত শিল্পে আগের মতো আর রুজিরোজগার না মেলায় অনেকেই তা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গিয়েছে।বংশপরম্পরায় চলে আসা রামজীবনপুর পৌরসভার ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাতে এখনও বেশকিছু পরিবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।সরকারি বিশেষ নজর বা কোনও সাহায্য বা পরিকাঠামো উন্নয়নে কিছু না মেলায় বন্ধের মুখে ঐতিহ্যের এই তাঁত শিল্পও।এখন মহাজনের উপর ভরসা রেখে মজুরি হিসাবে কাজ করতে হয় তাঁতিদের।রামজীবনপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে রয়েছে ১৩৫২ জন ভোটার তার মধ্যে তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন।তার পাশের ২ নং ওয়ার্ডেও রয়েছে৷ তাঁতিদের বসবাস,ওই ওয়ার্ডে প্রায় ১৮০০ র কাছাকাছি ভোটার আর তার মধ্যে তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির ভোটার সংখ্যা ৪৫০ র উপর।পৌর ভোটে বড় ভূমিকা থাকে এই তাঁত শিল্পীদের।সেকথা মাথায় রেখে ভোটের আগে প্রতিবারের মতো এবারও পৌর ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি,তারা পৌর বোর্ড গড়লে এই শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির সমস্যা সমাধানকে আগে প্রাধান্য দেবে।কিন্তু আদপে ভোট আসলে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিশ্রুতিই সার আখেরে তাদের জন্য কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।এবারের নির্বাচনে যেই পৌর বোর্ড গঠন করুক,তাদের বংশপরম্পরায় চলে আসা ঐতিহ্যের এই দুই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগী হবে এমনই দাবি তুলছে এই দুই শিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলির সদস্যরা।