বনমালী ষন্নিগ্রহী,বাঁকুড়াঃ লণ্ঠনের আলোর মতো টিম টিম করে চলছিল লণ্ঠন শিল্প, করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটাও যেন ধ্বংসের মুখে। করোনার পরিস্থিতির জেরে প্রায় দুবছর ধরে বন্ধ ব্যবসা বাণিজ্য। সমস্যায় পড়েছেন বাঁকুড়ার মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের লন্ঠন তৈরির কারিগর থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। মহাজনদের কাছ থেকে লন্ঠন তৈরির সামগ্রি কিনে নিয়ে এসে বিভিন্ন মাপের ছিনি, হাতুড়ির ঘায়ে নিপুন হাতের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় লন্ঠন। শিল্পীদের কথায়, এক একটি লন্ঠন তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। অনেক সময় নিপুন হাতের প্রচেষ্টায় এক একটি মডেল তৈরি হলেও মেলে না ন্যায্য দাম, যার জেরে তৈরি হয় হতাশা। ভেঙে পড়ে শিল্প সৃষ্টির মনোবল। একটা সময় এই শিল্পীরা গ্রাম থেকে শুরু করে শহর বা মফস্বলের প্রতিটা ঘরে ঘরে আলো জ্বালতো এই শিল্পীরা, চাহিদা ছিল ব্যাপক। সাপ্লাইও দেওয়া যেত না ঠিকঠাক চাহিদা অনুযায়ী৷ কিন্তু সময় পাল্টেছে, এখন মানুষগুলোর সাথে সাথে তাদের ব্যবহার্য জিনিসগুলোও অভিযোজিত হয়েছে।
গত দুবছর এই অতিমারী পরিস্থিতির জন্য এই লন্ঠন তৈরির শহরে আসে না কোনো মানুষজন,বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য হলেও কেনাকাটা বন্ধ এই কুটির শিল্পের সামগ্রির। বাড়িতে বসে থেকে কি লাভ তাই এই সব জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা মাত্র। শহরে দোকানের সংখ্যা একশো-দেড়শো থেকে এসে ঠেকেছে মাত্র কুড়ি-পঁচিশটা। কয়েক বছর আগেও এই লন্ঠন পাড়ি দিত বাংলার প্রতিটা প্রান্তর ছাড়িয়ে বিদেশে অবধি, সেজে উঠতো পূজো মন্ডপ। লন্ঠন দোকান গুলিতেও একটা সময় কাজ করতো ৪০-৪৫ জন মানুষ। এখন সংখ্যাটা দুই থেকে তিনে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র। কিন্তু আধুনিক যুগের বহমানতায় এখন সবটাই অতীত পুরোপুরি বিদ্ধস্ত বাংলার এই কুটির শিল্প। কিন্তু অনেকেই বসে আছেন বাপ ঠাকুরদাদার এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে।