হরি ঘোষ, রানীগঞ্জঃ অবশেষে ১৪ বছর খনি শহর রানীগঞ্জের অলিতে গলিতে রাজপথের ধারে ভবঘুরে হিসাবে দিন কাটানো মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজ হওয়া বছর ৫৫-র গুড্ডু সিং এর খোঁজ পেল তার আত্মীয় স্বজনরা। রানীগঞ্জের এক পুলিশ কর্মী রাজন কুমারের উপস্থিত বুদ্ধিতে ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন গুড্ডু সিংকে তার বাড়ি ফেরানো সম্ভব হল বলেই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় রানীগঞ্জের রাজপথের ধারে দীর্ঘদিন ধরেই ভবঘুরেকে দেখা যেত বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে নিজের শরীরকে তপ্ত রাখতে। বেশ কয়েক দফায় ওই ভবঘুরেকে বহুবার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে ঠিকঠাক কোন উত্তর না দেওয়ায় পুলিশকর্মীরা তার বাড়ির পরিচয় ও সঠিক নাম ঠিকানা কিছুই জানতে পারেনি। বেশ কয়েক দফায় তাকে নিয়ে এসে পুলিশ কর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন, কিন্তু তার নাম গোত্র ঠিকানা কিছুই না মেলায় তাকে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হয়নি। এরপর ফের ওই ভবঘুরে রানীগঞ্জের জগন্নাথ ব্রিজের নিচে নিজের স্থায়ী ঠিকানা করে নেয়। কনকনে শীতের মধ্যে দয়া দক্ষিণের দেওয়া শাল চাদর গায়ে মুড়ে অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছিল সে। এবার সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে পুলিশ আধিকারিক রাজন কুমার। উত্তর প্রদেশের যে গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ছিল ওই ভবঘুরে তারই কয়েকটি গ্রামের আশেপাশে বাস করত রাজন কুমার নামের ওই পুলিশ কর্মী। শুক্রবার রাতে যখন ওই পুলিশ কর্মী গুড্ডু সিং এর কাছে তার ভাষাভাষীতে কথা বলতে শুরু করেন তখনই গুড্ডু সিং নিজের গ্রাম উত্তর প্রদেশের মৌ জেলার পিরুয়া বলে জানায়। এরপর উত্তর প্রদেশের রানীপুর থানাকে এই ব্যক্তির খোঁজ দেওয়া হলে, তারা রাণীপুর গ্রামে পিরুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান গুড্ডু যাদবকে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য দিয়ে তার খোঁজ তল্লাশি শুরু করলে গ্রাম প্রধান তার সঙ্গে থাকা ওই ব্যক্তির ছেলের বন্ধু শ্রবণ যাদবকে বলেন। শ্রবণ তড়িঘড়ি তার বন্ধু অঙ্কিত সিংকে বছর ১৫ আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বাবার সম্পর্কে জানান দিলে তিনি কোন কাল বিলম্ব না করে শ্রবণ যাদবকে সঙ্গে নিয়ে রাতের ট্রেন ধরে সকালেই পৌঁছে যান রানীগঞ্জে। এরপর এক মুখ দাঁড়ি নিয়ে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকা বাবাকে দেখে চিনতে পারেন তার ছেলে অঙ্কিত। এরপর রানীগঞ্জ থানার পুলিশ ওই ভবঘুরেকে রানীগঞ্জ থানায় নিয়ে এসে তার পরিচয় যাচাই করে, তাকে পরিচ্ছন্ন করে ফিরিয়ে দিলেন তার পরিবারের হাতে। এতদিন পর নিখোঁজ বাবার খোঁজ পেয়ে পরিবারের সদস্যরা রানীগঞ্জ থানার পুলিশকে অসংখ্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।