আদৃতা ভট্টাচার্য, কলকাতাঃ মানুষ এক সামাজিক জীব। তাই স্বজন-পরিজনহীন মানুষের পক্ষে একলা জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। এমনই এক নিঃসঙ্গ, অসহায় ব্যক্তি টালিগঞ্জ মূর অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা মনোজ কুমার দাস। বিগত কয়েক মাস ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন।
এলাকার প্রতিবেশীদের থেকে জানা গিয়েছে যে তিনি পেশায় একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন। পাড়ার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে তিনি বহুবার দরকার অনুযায়ী ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও নানা ধরনের সাহায্য করেছিলেন। আরও জানা গিয়েছে যে, ওঁনার পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র বসবাস করলেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং একলাই থাকতেন। তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে গুরুতরভাবে অসুস্থ ছিলেন। যার ফলে রোজগারের পথে প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়েছিল। পর্যাপ্ত রোজগার না হওয়ায় দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম ব্যাহত হতো। প্রতিদিনের উপযুক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য কেনার সামর্থ্য ছিল না তার। অসুস্থ থাকার কারণে উপযুক্ত ওষুধপত্রের জোগান মেলাও দুস্কর হয়ে উঠেছিল। ফলে বিনা পর্যাপ্ত ওষুধে শারীরিক অসুস্থতা ক্রমশ বেড়েই চলেছিল। প্রতিবেশীদের থেকে আরও জানা যায় যে, উনি কিছু লোকদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার করেছিলেন। এমনকি ফেরিওয়ালাদের থেকেও ধার-বাকি'তে জিনিস কিনতেন। ফলে টাকা উসুলের জন্য লোকেরা তাগাদা দিতে আসত এবং নানাভাবে অপমানিত করত। এভাবেই দিন কাটাতেন তিনি। পাড়া প্রতিবেশীরা দেখাশোনা করতেন সুবিধামতো। দুবেলা খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন জনৈক প্রতিবেশী। শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে সারা শরীরে কালো কালো ‘ঘা' এর দাগ স্পষ্ট দেখা যেত। পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতা, অর্থাভাব, নিঃসঙ্গতা, অসুস্থতা, শারীরিক অক্ষমতা প্রভৃতি সব মিলিয়ে তিনি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন। গত সপ্তাহে হঠাৎই তার স্ট্রোক হয় এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অসাড় হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ প্রতিবেশীদের তৎপরতায় তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পুলিশের সহায়তায়। সেখানে দিন তিনেক থাকার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ ও প্রতিবেশীদের তৎপরতায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
স্বজনহীন, অর্থহীন অসহায়তা!
New Update