​দৈনন্দিন জীবনের “বাধা” ওমিক্রন

author-image
Harmeet
New Update
​দৈনন্দিন জীবনের “বাধা” ওমিক্রন

আদৃতা ভট্টাচার্য:     বিগত দুই বছর ধরে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যে দেখা দিয়েছে সীমাবদ্ধতা। স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতির উপর বেড়েছে বিশেষ নজর। বেহিসেবী খরচাপাতির জায়গায় লেগেছে লাগাম। কর্মস্থলে বেড়েছে কর্মী ছাঁটাইl শুধু জীবনযাত্রা নয়,অর্থনীতিরও ঘটেছে অবনতি। যার উপর নির্ভর করে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। মানুষের চলাচলের মধ্যেও এসেছে সীমানা। নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যেই মানুষ আজ সীমিত। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতিও প্রবল হয়েছে। পরিবারের সব বয়সী সদস্যরাই তাদের জীবনের স্বাভাবিকতাকে হারিয়ে ফেলেছে। শিশুদের স্কুল জীবন আজ ঘর বন্দী মুঠোবদ্ধ ফোনে। তাদের শৈশব, খেলার মাঠ, উচ্ছ্বাস সব-ই বন্ধ হয়েছে। সকাল থেকে বাড়িতে চার দেওয়ালে আবদ্ধ হয়ে থাকে তারা, কেননা বাইরের পৃথিবী যে আজ সংক্রমিত। মানুষকে প্রতি পদে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। বাড়িতে থেকেও মুখে পড়তে হচ্ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। বছর দুই আগেও মানুষ রোজ সকালবেলা বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজার করে ফিরতো। ক্রমে তাতেও এসেছে কিছু প্রতিকূলতা। কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় এসেছে শ্লথগতি। বাড়িতে ফিরে পারিবারিক “কোয়ালিটি টাইম”-ও আর কাটাতে হয় না। কেননা অধিকাংশই এখন “ওয়ার্ক ফ্রম হোম”। তাই পরিবারের শিশুদের সঙ্গে মা-বাবাদের আলাদা করে আর সময় কাটাতে হয় না। শিশুরাও বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে। স্কুল থেকে ফিরে তাদের বিকেলের খেলার মাঠ, টিউশনের আর পিছুটান নেই। প্রবীণ নাগরিকদের বিকেলের চা-এর আসর, আড্ডা, হাউস পার্টি প্রভৃতি থেকে বিরত আজ মানুষ।  করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্বেই প্রভূত পরিবর্তন ঘটে গেছে। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। রোজগার কম হওয়ার জন্য জীবনযাত্রার মান ও ধরণ পাল্টেছে। অপরদিকে, উৎপাদনের বৃদ্ধি কম হওয়ায় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে যা মধ্যবিত্তের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
  অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও মানুষের মানসিক পরিবর্তনও দেখা দিয়েছে। শিশুরা তথা শিক্ষার্থীরা স্কুল যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য একাকিত্ব অনুভব করছে। যা মানসিক রোগের কারণ হয়ে উঠছে বলে মনোবিদরা মনে করছেন। বন্ধুবান্ধবহীন নিঃসঙ্গ জীবনে তাদের মন ভারাক্রান্ত ও অবসাদগ্ৰস্ত হয়ে উঠছে।
  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে শুধুই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠছে “সোশ্যাল মিডিয়া” যেমন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি। কেননা বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রেও বাধ সেধেছে করোনা ভাইরাস বা “ওমিক্রন”। “Man is a social being”- এই বাক্য এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠান, উৎসব, মেলামেশা এখন নিয়ন্ত্রিত। বিধি লঙ্ঘন করে যারা অনুষ্ঠান বা উৎসব আয়োজন করছে তারা প্রশাসনের কোপে পড়ছে। মানুষ তাই আজ দিন গুনছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার। ফেলে আসা দিনগুলোর রঙীন স্মৃতি-ই আজ সম্বল।