ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি: সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত

author-image
Harmeet
New Update
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি: সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত

হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে শনিবার বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ ৮০০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে হালকা বৃষ্টি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ‘জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপ হিসেবে আজ রোববার দুপুর নাগাদ ভারতের উড়িষ্যার পুরি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরপর আরো দুর্বল হয়ে উড়িষ্যা উপকূল ধরে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে আসবে ‘জাওয়াদ’। তখন হয়তো এটি শক্তি ক্ষয়ে নিম্নচাপ বা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হবে।

ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা। জাওয়াদ’র প্রভাবে রোব ও সোমবার উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

 শনিবার দুপুরে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল বলে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হয়েছে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে।

কুয়াকাটায় পর্যটক সিকান্দার তানভীর বলেন, আমি শুক্রবার কুয়াকাটায় আসছি। আরও দুদিন থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজকে বৃষ্টি হচ্ছে সঙ্গে আবহাওয়াও অনেক খারাপ। তাই আজকেই চলে যাচ্ছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আজকে বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। তাই সৈকতে পর্যটক কম। সমুদ্র যদি বেশি উত্তাল হতে শুরু করে সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদেরকে সৈকত থেকে সরিয়ে নিরাপদে যাওয়ার নির্দেশ দিবো। আমাদের টিম সবসময় সৈকতে তৎপর আছে।

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, রোববার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। একই সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ভারতের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে। তিনি আরও বলেন, তবে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।