হরি ঘোষ, লাউদোহা : দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের বাঁশিয়া গ্রাম। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে এই গ্রামের লোকেদের মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়। রাস উৎসব ঘিরে চব্বিশ ঘণ্টা ধরেই চলছে ঠাকুরের নাম। সুন্দর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে রাধা কৃষ্ণের মন্দির প্রাঙ্গণ।
রাস’ শব্দটি এসেছে ‘রস’ থেকে। ‘রস’ মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম।‘লীলা’ অর্থ নৃত্য। রাসলীলা মূলত পুরাণের কৃষ্ণ ও বৈষ্ণব সাহিত্যের অতিজনপ্রিয় চরিত্র শ্রীমতি রাধার অপ্রাকৃত প্রেমলীলার একটি আখ্যান। বৃন্দাবনের গোপীদের নিয়ে রাধা ও কৃষ্ণ এই রাস করেন। নৃত্যগীতচুম্বনালিঙ্গনদীনাং রসানাং সমূহো রাসস্তন্ময়ী যা ক্রীড়া বা রাসক্রীড়া”। শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, কৃষ্ণ যোগমায়াকে সমীপে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন-
"যখন করেন হরি বস্ত্ৰহরণ।
গোপীদের কাছে তিনি করিলেন পণ।।
আগামী পূর্ণিমাকালে তাঁহাদের সনে।
করবেন রাসলীলা পুণ্য বৃন্দাবনে।।"
শ্রীকৃষ্ণের এই রাস লীলাকে ঘিরে বাঁশিয়া গ্রামের মানুষ ভক্তিরসে আত্মহারা। ২০০৭ সালে গ্রামের লোকেরা একত্রিত হয়ে ঠিক করেন গ্রামে শ্রীকৃষ্ণের রাস কে নিয়ে উৎসব করবেন। কথামতোই শুরু হয় কাজ। তারপর থেকে আজও চলে আসছে রাস উৎসব। বিগত দুই বছর করোনা অতিমারীর কারণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে কিন্তু এ বছর বর্তমানে করোনার পরিস্থিতি একটু শিথিল হওয়ায় চলছে নরনারায়ণ সেবা। গ্রামের মোট দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের বসতি। রাস উৎসবকে ঘিরে এই গ্রামের এটি বৈশিষ্ট্য যে আজকের দিন গ্রামের কারও বাড়িতে জ্বলবে না উনুন। এমনটাই জানালেন গ্রামের বাসিন্দা তথা এই উৎসবের একজন কর্মকর্তা বিপ্লব মণ্ডল ও সিপেন মণ্ডলরা। তাঁরা জানান, গ্রামের যদি কেউ এই মন্দির প্রাঙ্গণে এসে ভোগ গ্রহণ করতে না পারেন কোনো অসুস্থতার কারণে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামের লোক ছাড়াও আশেপাশের গ্রামের লোকেরাও পাত পেড়ে ভোগ গ্রহণ করতে আসেন এই মন্দির প্রাঙ্গণে। রাস উৎসবকে ঘিরে আনন্দে আত্মহারা হয়েছে দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের বাঁশিয়া গ্রামের মানুষজন।