দিগ্বিজয় মাহালী, চন্দ্রকোনাঃ
ঢিলছোড়া দূরত্বে বিগ বাজেটের দুটি জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর।বিগ বাজেটের এই দুই পুজোকে ঘিরে চন্দ্রকোনাবাসীর উন্মাদনা থাকলেও পুজোকে ঘিরে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।জানা যায়, ৩ বছর আগে চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড গোবিন্দপুর জিরাট হাইস্কুল ময়দানে 'জগদ্ধাত্রী পুজো উৎসব ও মেলা কমিটি' নামে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেছিলেন তৎকালীন চন্দ্রকোনা বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক ছায়া দোলুই। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে দলীয় কাজে বর্তমানে নিস্ক্রিয় তিনি। কিন্তু বর্তমানে সেই পুজোর দায়ভার গ্রহণ করেন প্রাক্তন বিধায়ক ছায়া দোলুইইয়ের ঘনিষ্ঠ চন্দ্রকোনা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ সহ এলাকার বেশ কিছু তৃণমূল নেতাকর্মী সহ চন্দ্রকোনা ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জগজিৎ সরকার। অপরদিকে চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড সুরেরহাট মাঠে ৪ বছর আগে, চন্দ্রকোনায় প্রথম এই পুজোর আয়োজন করে 'চন্দ্রকোনা মিলন মেলা কমিটি'। এবছর তাদের জগদ্ধাত্রী পুজো ৫ তম বর্ষে পদার্পন করেছে। এই পুজোর আয়োজক তৎকালীন চন্দ্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক অরূপ ধাড়া বর্তমানে তিনি চন্দ্রকোনা বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। অরুপ ধাড়ার সাথে পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা আবার চন্দ্রকোনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সাঁতরা। এই দুই জগদ্ধাত্রী পূজোকে ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম উন্মাদনা। চলচ্চিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে খ্যাতনামা সংগীত শিল্পীদের এনে চলে একে অপরকে জোর টেক্কা দেওয়ার লড়াই। এবছরও দুই গোষ্ঠীর জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুষ্ঠান মঞ্চে আসছেন চলচ্চিত্রের সংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ষষ্ঠীর দিনে দুই পুজোরই বুধবার উদ্বোধন করেছেন জেলা তৃণমূলের নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের আধিকারিকরাও।
এমনকি উদ্বোধনের দিনে বিধায়ক অরুপ ধাড়ার আয়োজিত সুরেরহাট মাঠে পুজোর উদ্বোধনে দেখা যায় জুন মালিয়া, লাভলী মৈত্রী, দেবাংশু ভট্টাচার্য সহ একগুচ্ছ জেলার তৃণমূল নেতা,বিধায়কদের। অপরদিকে একই দিনে প্রাক্তন বিধায়ক ছায়া দোলুইয়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষদের আয়োজিত জিরাট হাইস্কুল মাঠে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে হাজির ছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য সহ জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা। যদিও চন্দ্রকোনা সুরেরহাট মিলন মেলা জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক তথা বিধায়ক অরুপ ধাড়া ঘনিষ্ঠ চন্দ্রকোনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সাঁতরা বলেন, পুজোতে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। মা জগদ্ধাত্রী পুজোর আরাধনায় সকলেই ।আমরাও সেই আরাধনায় সামিল। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথাটি তিনি একেবারেই এড়িয়ে গিয়েছেন। অপরদিকে চন্দ্রকোনা জিরাট হাইস্কুল মাঠে হওয়া 'জগদ্ধাত্রী পুজো উৎসব ও মেলা কমিটি'র অন্যতম উদ্যোক্তা তথা চন্দ্রকোনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ বলেন,"গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোন ব্যাপার নেই,তবে আমরা ওই পুজোতে কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। ওখানে স্থানীয় সমস্ত নেতা নেত্রীরা উপস্থিত থাকলেও আমাদের কেউ কোন ডাক পাইনি। কিন্তু আমাদের পুজোর উদ্বোধনে আমরা বিধায়ক অরুপ ধাড়াকে আমন্ত্রণ করলেও তিনি আমাদের পুজোতে আসেনি।" তবে যাই হোক না কেন চন্দ্রকোনার এই দুই বিগ বাজেটের জগদ্ধাত্রী পুজোতে প্রকাশ্যে উঠে এসেছে তৃণমূলের দীর্ঘদিন ধরে দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব। করোনা পরিস্থিতিতেও বিধি নিষেধ ভুলে এবছরও শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর আয়োজিত জগদ্ধাত্রী পুজোয় লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে নামিদামি শিল্পী,অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে এসে ৪-৫ দিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুজোয় গা ভাসিয়েছে চন্দ্রকোনা সহ পার্শ্ববর্তী বহু এলাকার মানুষ।