হরি ঘোষ, দুর্গাপুরঃ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাটির লক্ষ্মীর ভাঁড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহৃত ইমোজি'র ছোঁয়া দিতেই ফের এই ভাঁড়ের কদর বাড়ছে দুর্গাপুরে। এমনই দাবি দুর্গাপুরের শিল্পী মোনালিসা মন্ডলের। তিনি স্মার্ট মোবাইল ফোনের যুগে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ইমোজির লাফিং, জয়, রিলেক্সড, স্মাইলি,হার্ট আইস,কিসিং হার্ট সহ একাধিক ফেস ক্যারেকটার। এছাড়াও লক্ষ্মীর পা, স্বস্তিকা চিহ্ন ও বিভিন্ন কারুকার্য সহ ফোক আর্ট এঁকেছেন। কেবল লক্ষ্মীর ভাঁড় নয় এছাড়াও পুজোর ঘট ও ধুনুচি সহ চায়ের ভাঁড়েও কারুকার্য ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। প্রায় বিলুপ্ত হওয়া লক্ষ্মীর ভাঁড়কে কাজে লাগিয়ে বেকারদের লক্ষ্মী লাভের দিশা দেখাচ্ছেন মোনালিসা। তাঁর দাবি, আদিকালের মাটির এই ভাঁড় এখন অর্থ সঞ্চয়ের পাশাপাশি গৃহসজ্জায় সৌন্দর্যায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। দুর্গাপুরের ধাণ্ডাবাগ এলাকার বাসিন্দা বছর ৩০ এর মোনালিসা মন্ডল। মোনালিসাদেবী ছোটো থেকেই দুর্গাপুরের খ্যাতনামা পেশাদার বাংলা ও হিন্দি আধুনিক ও ক্লাসিকাল সঙ্গীত শিল্পী। ফিলোসফিতে এমএ করেছেন। তিনি গৃহশিক্ষিকাও। এর মধ্যে লকডাউনে ও করোনার বিধিনিষেধের বেড়াজালে প্রাইভেট টিউশনি পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবে সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড়বছর কর্ম জীবন থেকে বঞ্চিত থাকায় বাড়িতে বসে অবসাদে ভুগতে থাকেন তিনি। তাঁর এক পরিচিত তাঁকে সেই সময় একটি মাটির লক্ষ্মীর ভাঁড় রঙ করতে বলেন। সেটা রঙ করতেই লকডাউনে অনিহা কেটে ওঠে। টাকা উপার্জনের উপায় খুঁজে পান তিনি। প্রায় বিলুপ্ত মাটির লক্ষ্মীর ভাঁড়ে তুলির টানে আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়া শুরু করেন। যদিও তাঁর অভিনবত্ব ভাবনাচিন্তার মধ্যে তাঁর বিশেষ দাবি যে তিনি প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত অঙ্কন শিল্পী নয়। তাঁর মনোবল তাঁকে বিভিন্ন আধুনিক ছবি সহ কারুকার্য মাটির সামগ্রীতে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, 'আমি লক্ষ্মীর ভাঁড়, ধুনুচি ও পুজোর মাটির ঘট কিনে এনে তাতে প্রথম নিজের মনের কারুকার্য ফুটিয়ে তুলে সফল হই। সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতেই অনেকেই ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেন আমাকে। উৎসাহ মিলতেই মনোযোগ দিয়ে বেশ অনেকগুলি তৈরি করি। সেগুলি ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় পেশ করতেই একাধিক গ্রাহক মিলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শতাধিক অর্ডার আসতে থাকে। বর্তমানে শহরের বেশকিছু মেলায় আমার কারুকার্য নিয়ে বসেছি। ভালো সাফল্য ও বেশ উৎসাহ মিলেছে। ১০ - ৩০ টাকা দিয়ে ওই মাটির সামগ্রী কিনে সেগুলি রং করে তাতে ছবি এঁকে বিক্রি করি ৫০-১০০ টাকা করে। মাটির লক্ষীভাঁড় বর্তমানে শহরের মানুষ ব্যবহার করেনা বললেই চলে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া দিতেই ফের সবাই ব্যবহার করছে।'