শিশুকন্যা কমলার মৃত্যুকে স্মরণ করে চৈতার দুয়ারী পরিবারের লক্ষী কমলা রুপে পুজিতা হন

author-image
Harmeet
New Update
শিশুকন্যা কমলার মৃত্যুকে স্মরণ করে চৈতার দুয়ারী পরিবারের লক্ষী কমলা রুপে পুজিতা হন









নিউজ ডেস্কঃ মেদিনীপুর :- শিশু কন্যা কমলার মৃত্যুকে স্মরণ করে শালবনীর চৈতা গ্রামের দুয়ারী পরিবারের লক্ষী দেবী কমলা রুপে পুজিতা হন।



 শালবনীর গোদাপিয়াশালের জমিদারের নায়েব ছিলেন চৈতা গ্রামের রাধেশ্যাম দুয়ারী। তার দুই পুত্র গৌর ও নিতাই। শালবনীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের জমি ছিল। বাইরের জমির দেখাশুনো করতেন বড়ো পুত্র গৌর। আর বাড়ির দেখাশুনো করতেন ছোটো পুত্র নিতাই। জমিদারী প্রথা উঠে যাওয়ার পর তাদের জমি জায়গা বেদখল হয়ে পড়ে। ফলে নায়েবি চলে যায়। কিন্তু নায়েবি চলে গেলেও তাদের নায়েবিয়ানা তখনও বজায় ছিল। কিন্তু কালের নিয়মে তাদেরও শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট । ফলে নিতাই বাবু সরকারী চাকুরী নিয়ে কলকাতায় থাকতে শুরু করেন একাই।



দুয়ারী দুই ছেলের বিয়ে দেন। নিতাই ও তিলকার এক কন্যা ও তিন পুত্র এবং গৌর ও জ্যোৎস্না দুয়ারীর পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র।



দুয়ারী পরিবারে লক্ষী পুজো শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। নিষ্ঠা ভরেই পুজো হয়ে আসছিল। পুজো শুরু হওয়ার দুই বছরের মাথায় দুই ভাইয়ের একটি করে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। কন্যাদ্বয়ের দুই বছর বয়স। সবে ছোটো ছোটো পায়ে হেঁটে বেড়াতে শুরু করেছে। পরের বছর লক্ষী পুজো শেষের  দিন পনেরো আগে, বাড়িতে সকলেই কাজে ব্যস্ত ছিল সেই সময় সকলের অলক্ষ্যেই নিতাই এর  একমাত্র কন্যা কমলা বাড়ির অদুরে একটি পুকুরের জলে ডুবে মারা যায়। বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাড়িতে ওই সময় কোনো পুরুষ মানুষ ছিলেন না। নিতাই বাবু কলকাতাতে থাকতেন কর্মসূত্রে। আর জমি জায়গার বিষয়ে সেদিন গৌর বাবুও বাড়িতে ছিলেন না। পরের দিন গৌর বাবু বাড়িতে ফিরে এসে কমলার মৃত্যুতে শোকে পাগল হয়ে প্রতিজ্ঞা করে বসেন যে, যদি আবার বাড়িতে নতুন অতিথির আগমন ঘটে তখনই আবার লক্ষীর আরাধনা করা হবে তার আগে নয়। তখন থেকেই দুয়ারী বাড়িতে ধন দেবীর আরাধনা বন্ধ থাকে। দেখতে দেখতে বছর কেটে যায়। অন্তসত্ত্বা হয় নিতাই এর  স্ত্রী তিলকা।



এক বছর পর লক্ষী পুজোর দিনই সকালে গৌর দুয়ারী স্থানীয় পিড়াকাটা বাজারে গিয়ে নিজের অজান্তেই মেয়ের জন্য প্রচুর ফল কিনে নিয়ে বাড়িতে গেলে পাঁচ বছরের মেয়ে দীপালি বাবার কাছে জানতে চায় এত ফল কি হবে। দীপালি কে তার বাবা জানায় পুজো হবে। কিন্তু কী পুজো হবে আর ঠাকুরই বা কোথায় মেয়ে বাবার কাছে জানতে চায়। এমন সময় হঠাৎ করেই তিলকা প্রসব যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানেই তিলকা জন্ম দেয় এক শিশু পুত্রের।

গৌর দুয়ারীর প্রতিজ্ঞা ছিল লক্ষী পুজোর দিন যদি কোনো নবজাতকের জন্ম হয় তবেই বাড়িতে ফের শুরু হবে লক্ষী পুজো। এদিকে নিয়তির পরিহাসে গৌর তার মেয়ে দীপালি কে জানায় বাড়িতে পুজো হবে। ফলে ধনদেবীর আরাধনার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। পুজোর মাত্র হাতে কয়েক ঘন্টা বাকি। কিভাবে পুজো হবে?



গৌর বাবু নিজেই সাতপাটি থেকে মাত্র সাত টাকায় প্রতিমা কিনে এনে পুজো শুরু করেন। সেই থেকেই দুয়ারী পরিবারে লক্ষীপুজো শুরু হয়। যা এখনো নিয়ম নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে চলে আসছে।এবং দুয়ারী পরিবারে লক্ষীকে সেদিন থেকেই কন্যারূপে পুজো করা হয়।

দুয়ারী পরিবারে ধনদেবীকে কন্যা কমলা রূপে পুজিতা হলেও পুজিতা হন নিয়ম নিষ্ঠা ভরেই। দুয়ারী পরিবারের এক সদস্য রামকৃষ্ণ দুয়ারী জানান আমরা তখন খুবই ছোটো ছিলাম। একবছর পুজোর বিসর্জন নিয়ে কিছু অনিয়ম হয়ে যাওয়ার কারনে বাড়িতে আগুন লেগে যায়। বড়োরা বলতেন অনিয়মের জন্যই মায়ের কোপে পড়তে হয় তাদের। তারপর থেকে কোনোরুপ ত্রুটি রাখা হয় না পুজোতে।



দুয়ারী পরিবারের পুজো এবছর ৪২ বর্ষে পড়লো। এবছর বাজেট পায় ৮০ হাজার টাকা। তিন দিন ধরে চলে পুজো। তিন দিন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বন্ধবরা সকলেই একত্রিত হয় এই দুয়ারী পরিবারে বলে জানান এই পরিবারের আরেক সদস্য মৃন্ময় দুয়ারী৷ তিনি আরো জানান এখনো পুজোর দিন মা কাকিমা সারাদিন উপোস করে থাকেন। পুজোর নিয়ম নিষ্টা তারাই আমাদের শিখিয়ে দেন। আর প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই জ্যোৎস্না, তিলকারা বয়সের ভরে কাবু হলেও পুজোর তিন দিন তাদেরই যেন ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশী।