হরি ঘোষ, দুর্গাপুরঃ ছেলেবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন শঙ্কর। আর তার জন্যই পরিবারের লোকজন শঙ্করকে চেন দিয়ে বেঁধে রাখে ঘরে। শঙ্কর যখন বাইরে বেরোয় ছেলে হারিয়ে না যায় তার জন্য পায়ে শেকল পড়ানো থাকে শঙ্করের।মঙ্গলবারও দেখা গেল একই চিত্র। বেশ কয়েকবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা হয়েছে তার, কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি, বরং উল্টে ছেলেটির বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাই বড় কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেনি শঙ্করের পরিবার। দুর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লীর বাসিন্দা শঙ্করের বাবা অন্যের জমিতে চাষ করে কোনোরকম দিন গুজরান করেন, তাই বড় নামকরা চিকৎসকের কাছে যাওয়াটা এই সরকার পরিবারের কাছে ছেড়া কাথায় শুয়ে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখার মতো । তাই আর্থিক অনটনের সংসারে এখন শঙ্করের ভরসা বলতে এই লোহার শিকল, যে শিকল শুধু আসেপৃষ্ঠে শঙ্করকে বেঁধে রেখেছে তা নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন এই ছেলেটির ভাগ্যকেও বেঁধে রেখেছে লোহার বেড়াজালে। এই পরিবারে তাই শঙ্কর আজ ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায়, আর তাঁর মা স্নেহময়ী কোলের বাঁধন থেকে যেন ছেলে বেরিয়ে না যেতে পারে তার জন্য কখনো ঘরে চেন দিয়ে বেঁধে রাখে আবার কখনো বা পায়ে সেই চেন পরিয়ে রাখে । কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না, অভাবি পরিবারের ছেলেটি যাতে চিকিৎসার সুযোগ পায় তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। দূর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লীর অভাবি পরিবারের ছেলে শঙ্কর,ছেলেটি খুব একটা জ্বালাতন করেনা কাউকে, মুখে না বলতে পারলেও ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠতে চায় ফিরে যেতে চায় স্বাভাবিক জীবনে, লোহার শেকলের চেন ভেঙে দিয়ে সে মুক্ত পরিবেশে বুক ভরে শ্বাস নিতে চায়, এক গর্ভধারিণী মা চায় তার স্নেহময়ী কোলে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে, সত্যি কি সেই সুদিন ফিরবে? প্রশ্নটা সোজা কিন্তু উত্তরটা ততটাই কঠিন। তবে কাঁকসার অজয়পল্লীর মানসিক ভারসাম্যহীন শঙ্করের এই লোহার চেন বাঁধা জীবন যন্ত্রণার ছবি একরাশ লজ্জা আর প্রশ্নের বেড়াজালে বন্দি করে দিয়েছে এই সমাজকে