রাজ প্রথা মেনে কোচবিহারে বড় দেবীর মন্দিরে স্থাপিত হল ময়নাকাঠ

author-image
Harmeet
New Update
রাজ প্রথা মেনে কোচবিহারে বড় দেবীর মন্দিরে স্থাপিত হল ময়নাকাঠ



দেবাশিস বিশ্বাস কোচবিহারঃ  রাজ আমলের রীতি মেনে রাধা অষ্টমীতে কোচবিহার বড় দেবীর মন্দিরে স্থাপিত হল ময়না কাঠ। আজ ময়না কাঠের স্থাপনকে কেন্দ্র করে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় সেখানে। ওই পুজোয় উপস্থিত ছিলেন দেবত্বর ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা জেলা শাসক পবন কাদিয়ান, দেবত্বর ট্রাস্ট বোর্ডের দুয়ারবক্সি অজয় কুমার দেব বক্সি, রাজ পুরহিত হিরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সহ দেবত্বর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মীরা। এদিন ওই বিশেষ পূজার পর ময়নাকাঠকে তিন দিন হাওয়া খাওয়ানো হবে। আর তারপরেই ময়না কাঠের উপরে তৈরি হবে বড় দেবীর মূর্তি।

কোচবিহারের রাজাদের স্বপ্নাদেশে পাওয়া বড় দেবীর পূজা ৫০০ বছরেরও বেশী পুরনো। বড় দেবী অন্যান্য দুর্গা প্রতিমার থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে দেবীর বাহন বাঘ, আর দেবীর দুপাশে রয়েছে জয়া বিজয়া। বড় দেবীর পুজোয় এক সময় নর বলির প্রচলন ছিল। এখন প্রতীকী হিসেবে পুতুল বলি দেওয়া হয়ে থাকে। সাথে দেওয়া হয় আঙ্গুল চিরে নর রক্ত। এছাড়াও পাঠা, মোষ, মাগুর মাছ, পায়রা এমনকি শুকোরও বলি দেওয়ার প্রচলন এখনও রয়েছে বড় দেবীর পূজায়। প্রাচীন এই পুজো দেখতে শুধু কোচবিহারের মানুষই নয়, প্রতিবেশী রাজ্য অসম, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু গত বছর থেকে করোনা মহামারির দাপটে ভির কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে। এবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে দর্শনার্থীরা ফের ভির জমাবেন বলেই কোচবিহারের মানুষের প্রত্যাশা।
 
এদিন পুজো শেষে কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ান জানান, আজও বড় দেবীকে সম্পূর্ণ নিষ্ঠা এবং শ্রদ্ধার সাথে পুজো করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের পূজা মরসুম শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু করোনা এখনো আমাদের ছেড়ে যায়নি। তাই পূজা দেখুন, মজা করুন কিন্ত করোনা বিধি মেনে।” এদিন রাজ পুরোহিত হিরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, গতকাল রাতে অর্থাৎ রাধা পঞ্চমীর শেষ রাতে এই ময়না কাঠ কোচবিহার মদন মোহন মন্দির থেকে বড় দেবীর মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। তার পর আজ রাধা অষ্টমীর পূর্ণ তিথিতে এই ময়না কাঠের বিশেষ স্নান ও বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এর পর এই ময়না কাঠকে ৩ দিন হাওয়া খাওয়ানোর পর মৃৎ শিল্পীরা দেবীর মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করবেন। বড়দেবীর পূজা সহ রাজ পরিবারের সাথে যুক্ত বিভিন্ন পূজার্চনার কাজে মহারাজার অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধিত্ব করতেন দুয়ারবক্সি। আজও সেই পরম্পরা রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে দুয়ার বক্সি অজয় কুমার বক্সী জানিয়েছেন, এক সময় তাঁর বাবা ও দাদা ওই দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে তিনি সেই দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের বংশে আর উত্তরাধিকার না থাকায় একটা সময় এই রীতি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এখনও বড় দেবীর পূজা বা মদনমোহন মন্দিরের পূজার্চনার কাজে ডাক পড়লেই তাঁর সেই রাজ ইতিহাসের অনেক স্মৃতির কথা ভেসে ওঠে বলে জানিয়েছেন অজয় বাবু।