শান্তনু পুরকাইত, নামখানা: অন্ধকারময় স্যাঁতস্যাঁতে ঘর । ঘরের এক কোণে বসে বই নিয়ে হাতে এক কিশোরী। জানালার আলো দিয়ে বই পড়ছে সে। সঙ্গীতা মন্ডলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেবীকা হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে পড়ে ইয়াসের জেরে। ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বাড়িতে জল উঠে আসায় হারিয়েছে বই খাতা, বাড়ির সরঞ্জম। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে । নামখানা ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দশমাইলে অসম্পূর্ণ সরকারের দেওয়া পলেতিন মোরা ঘরে বাস মন্ডল পরিবারের। বাবা অরবিন্দু মন্ডল, মা সুচিত্রা মন্ডল আর ছোট বোন রঙ্গিতা মন্ডলকে নিয়ে থাকে সঙ্গীতা ।
বাড়ির পাশে রয়েছে চিনাই নদীর শাখা নদী। সেই নদীর জলোচ্ছাসে তছনছ হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। বাদ যায়নি তার বাড়িও। আসবাস পত্র শেষ । বাড়ির সবকিছু হারিয়ে সর্বহারা মন্ডল পরিবার। তার থেকে বই হারিয়ে আরো বেশী সর্বহারা হয়ে পড়েছে সঙ্গীতা। দুবেলা দু'মুঠো খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। বাবা পেশায় মৎসজীবি। এখন দিনমজুর মায়ের উপর নির্ভর । বাবা কঠিন রোগে আক্রান্ত । সেই সুবাদে স্বপ্ন ছিল উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সেবীকা হবে। বিগত জীবনের যন্ত্রনার কথা সে ভুলবে।
বছর দুয়েক আগে গৃহ শিক্ষকের দ্বারা পাচার হয়েছিল কিশোরী । তিনমাস পর উদ্ধার হয় পুলিশ, প্রশাসন আর স্বেচ্ছা সেবকদের মাধ্যমে। আজ তার থেকেও বেশী যন্ত্রনায় ভুগছে সঙ্গীতা । কাকদ্বীপ জ্ঞানদাময়ী বিদ্যাপিট থেকে এবারে মাধ্যমিক দেওয়ার কথা তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ । খাতা বই হারিয়ে একাকি সঙ্গীতা । নাওয়া খাওয়া ভুলে শুকনো মুখে বাড়ির বাড়ান্দায় বসে চিন্তা মগ্ন কিশোরী সঙ্গীতা।