দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : জায়গার অভাব। নিজস্ব ভবন নেই। যাযাবরের মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঠাঁই নিয়ে চলে চন্দ্রকোনার নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তেমনই একটি আশ্রমের ভাঙাচোরা বাড়িতে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লন্ঠনের আলোয় চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে অভিভাবকরা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ওই কেন্দ্রে পাঠাতে আতঙ্কিত অভিভাবকরা।
এমনই বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রায় ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লন্ঠনের আলোয় চলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে নয়াগঞ্জ ১৭৪ নং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রুমা সাহা জানান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে বর্তমানে প্রসূতি, ছাত্রছাত্রী মিলে মোট ৮০ জনের মিড ডে মিলের রান্না হয়, ৮০ জনের মধ্যে ৩০ জন ক্ষুদে পড়ুয়া রয়েছে।আগে এই কেন্দ্রটি ওয়ার্ডের নয়াগঞ্জ দেশ কমিটির একটি শিবমন্দিরের জায়গায় চলতো সেখান থেকে সরে যেতে বলায় প্রায় ১০ বছর হল ওই ওয়ার্ডেরই একটি আশ্রমের একচিলতে ভগ্নপ্রায় রুমে আশ্রয় নিয়ে চলছে নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। যেখানে নেই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ,রুমের ভিতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ,ছাদ ভাঙা, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর। ওই একই কক্ষে থাকে মিড ডে মিলের যাবতীয় সামগ্রূ আর তারই একপাশে মাদুর পেতে কখনও মোমবাতি তো আবার কখনও বিলুপ্ত প্রায় লন্ঠনের আলোয় চলে ক্ষুদে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন।
কেন্দ্রের সহায়িকা জানান, এভাবে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই ভাঙাচোরা অন্ধকার কক্ষে পঠনপাঠন করাতে রীতিমতো ঝুঁকির।এছাড়াও ওই ভবনের দুয়ারে ত্রিপল টাঁঙিয়ে মিড ডে মিলের রান্না করতে হয় রাঁধুনিকে।মিড ডে মিলের রান্নার জায়গায়টিও চরম অস্বাস্থ্যকর, আশপাশে ঝোপঝাড় হয়ে যায়।খাবারে কখন কি পড়ে যায় সেদিকে সর্বক্ষণ নজর দিতে হয়। বর্ষাকাল বা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে বলে দাবি কেন্দ্রের রাঁধুনি থেকে সহায়িকার।এবিষয়ে একাধিক বার প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রুমা সাহার। তিনি বলেন, প্রশাসনের তরফে ভবন তৈরি করে দেওয়ার কথা বলা হলেও স্থানীয় স্তরে জায়গার অভাব, আর জায়গা না মেলায় এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে অবিভাবিকারা বলেন,নিজস্ব কোনও ভবন না থাকায় এখানে ওখানে স্থান পরিবর্তন করে চলে আসছে এই কেন্দ্রটি।এখন যেখানে চলছে তার পরিবেশ একদমই অস্বাস্থ্যকর এবং ভয়ঙ্কর।যার জেরে ছেলেমেয়েদের এখানে পাঠাতেই ভয় করে।কখনও সাপ তো আবার কেন্নোর আনাগোনা লেগে থাকে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে।তার উপর বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারে এভাবেই লন্ঠনের আলোয় পঠনপাঠন চলে। দ্রুত এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য ভালে জায়গা চিহ্নিত করে নিজস্ব ভবন তৈরির উদ্যোগ নিক প্রশাসন, দাবি এলাকাবাসী থেকে অভিভাবিকাদের।
যেই আশ্রমের ভাঙাচোরা কক্ষে চলছে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি সেই আশ্রমের মহারাজ সৌমেন রাম রামানুজ দাস মহন্ত জানান,"অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি আগে যে জায়গায় ছিল সেখান থেকে সরে যেতে বলায় আমার কাছে এসে একটি রুম চাওয়া হয়েছিল।ওই কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়ে গেলে ছেড়ে দেবে এমনটাই তৎকালীন সময় বলা হয়েছিল।সেই মতো আশ্রমের একটি রুম দেওয়া হয় কিন্তু তারপর থেকে কোনও অগ্রগতি হয়নি আর ওই রুমটিও মেরামতের জন্য কেউ কোনও নজর দেয়নি।" বর্তমান ডিজিটাল জামানায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পঠনপাঠন লন্ঠনের আলোয় চলে আসছে তা শুনতে অবাস্তব হলেও এটাই বাস্তব চিত্র চন্দ্রকোনার এই নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির।