দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাই সার, ধান কাটার পর জমিতে অবাধে চলছে নাড়া পোড়ানো। ধোঁয়ায় ঢাকছে গোটা এলাকা। ছড়াচ্ছে দূষণ। হুঁশ নেই কারো।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ জুড়ে উঠে এলো এমনই অসচেতনতার ছবি। এমনকি জেলার সর্বত্রই এক ছবি।
শুরু হয়েছে মাঠ থেকে পাকা ধান বাড়িতে তোলার কাজ। বর্তমানে শ্রমিকের অভাব,খরচ ও সময় বাঁচাতে চাষীরা ধান কাটার কাজে ব্যবহার করছেন কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। মেশিনে ধান কাটার পর জমিতে রয়ে যায় ধান গাছের বড় বড় নাড়া ও খড়। তাতে আগুন লাগিয়ে জমি পরিষ্কার করে পুনরায় চাষ করার প্রস্ততি শুরু হয়েছে মাঠ জুড়ে। জমিতে আগুন লাগিয়ে নাড়া পোড়ানোর জেরে জমির উর্বরতা নষ্ট যেমন হয় পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। এসব জেনেও তা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে চাষীরা। এর জেরে ধোঁয়ায় ঢাকছে গোটা এলাকা,পাশাপাশি আগুনের তাপে জমিতে থাকা কৃষকের বন্ধু বলে পরিচিত 'কেঁচো' নষ্ট হচ্ছে তেমনই কীটপতঙ্কও ধ্বংস হচ্ছে। একদিকে জমির উর্বরতা কমছে অপরদিকে এভাবে জমিতে আগুন লাগানোয় তার ধোঁয়ায় ব্যাপক হারে বায়ু দূষণের মতো ঘটনা ঘটে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এবিষয়ে কৃষি দপ্তরের তরফে কৃষকদের সচেতনতায় প্রচার বা কর্মশালা করা হলেও, প্রতিবছরই ধান কাটার পর জমিতে আগুন লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। যদিও কৃষকদের দাবি, একে শ্রমিকের অভাব, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটায় খরচ বেশি আর সময়ও প্রচুর লাগে।তাই বিগত কয়েকবছর ধরে অত্যাধুনিক কম্বাইন হারভেরস্টার মেশিনের সাহায্য তারা ধান কেটে অনেকটাই লাভবান হচ্ছে। এতে স্বল্প সময়ে জমিতেই বিঘার পর বিঘা জমির ধান কাটাই ঝাড়াই হয়ে বাড়ি চলে যায়।শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে যে খরচ হয় তার অর্ধেকেরও কম খরচ মেশিনে কাটলে।ফলে চাষের কাজে এইসমস্ত অত্যাধুনিক মেশিনের ব্যবহারের প্রবনতা কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে চাষীদের মধ্যে।ধান কাটার মরসুমে চলছে এইসমস্ত মেশিনের ব্যবহার,মেশিনে ধান কাটার পর জমিতে পড়ে থাকছে নাড়া ও খড়।এসব চাষীরা সংগ্রহ না করে জমি পরিষ্কার করতে আগুন লাগিয়ে তা নষ্ট করার প্রবনতা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
এ বিষয়ে ঘাটাল মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা শ্যামাপদ সাঁতরা বলেন, প্রতিনিয়ত সচেতন করা হচ্ছে কৃষকদের, এমনকি এই নাড়া পোড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ সেটিও কৃষকদের জানানো হচ্ছে।এবিষয়ে সকলকেই সচেতন হতে হবে।"এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের বিডিও অমিত ঘোষ বলেন,প্রশাসনের তরফ থেকে একাধিক সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে প্রয়োজনে আইনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।চাষীদের এনিয়ে সচেতনতায় যেমন বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করা হয়েছে পাশাপাশি তাদের নিয়ে একাধিক শিবিরও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।আর এই নাড়া পোড়ানোকে উত্তর ভারতের কালচার যা পরে পশ্চিমবাংলায় প্রবেশ করেছে বলে কটাক্ষ করে এবিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ডঃ মানসরঞ্জন ভূঁইয়া বলেন,"এই নাড়া পোড়ানো কালচারটা উত্তর ভারতের সবথেকে বেশি ছিল,এই পদ্ধতি মানসিকতা পশ্চিমবাংলায় কিছু কিছু জায়গায় ঢুকেছে।এর ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে এ বিষয়ে আমরা সমস্ত প্রশাসনিক দপ্তরে সচেতন করেছি নজর রাখার জন্য।"
প্রতিবছরই এসময় ধান কাটার মরসুমে নাড়া পোড়ানোর একই ছবি ধরা পড়ে আর প্রশাসনের তরফে একই বুলি আওড়ানো হয়,আদতে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলেই দাবি সচেতন মানুষদের।দিল্লিতে দূষণ আর যার জেরে সেখানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকলেই সচেতন ভাবে নাড়া পোড়ানো বন্ধে সদর্থক ভূমিকা পালন করা উচিত বলেই মত সমাজ সচেতন মানুষদের।