চার হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ, জেলা শাসকের দফতরে ডেপুটেশন

author-image
Harmeet
New Update
চার হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ, জেলা শাসকের দফতরে ডেপুটেশন

দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : চার হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত শালবনীতে, জেলা শাসকের দফতরে ডেপুটেশন জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির।পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে প্রায় ৪০০০ পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ পাঠাল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। যা বিনা মেঘে বজ্রপাতের চেয়েও নিষ্ঠুর ও নির্মম বলে আখ্যা জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির। জানা গিয়েছে, ১৯৪২ সালে ছিল রয়াল এয়ারফোর্সের যুদ্ধ বিমান ঘাঁটি। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তা সক্রিয় ছিল। তারপর থেকে অপরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল কয়েক হাজার একর জমি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই জমিতে পরে গড়ে ওঠে নোট মুদ্রণ ছাপাখানা ও সিআরএফ-এর কোবরা বাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প। পাশাপাশি এক সময় ব্রিটিশ বাহিনী দ্বারা উচ্ছেদ হওয়া মানুষজন এই জমির উপরেই পরে বসতবাড়ি গড়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। এমনই ২২টি মৌজার প্রায় ৪০০০ পরিবার বসবাস শুরু করছেন বর্তমানে। ওই জমি উদ্ধার করতে নেমেছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। 



পাঁচ পুরুষ ধরে বসবাস করে আসা ভিটেমাটি ছেড়ে উচ্ছেদ হতে হবে শালবনীর বাঁকিবাধ অঞ্চলের ঢেঙ্গাশোল, কমলা, বড় বাখরা, জামবনী প্রভৃতি মিলিয়ে ২২ টি মৌজার প্রায় ৪০০০ পরিবারকে। জানা গিয়েছে, এই পরিত্যক্ত জমিতে একসময় বায়ু সেনার বিমান ওঠানামা করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও পরবর্তীকালে বহু অংশে মানুষ বসবাস শুরু করেন। অনেকে চাষবাস শুরু করেন। কোনোরকমে দশকের পর দশক দিনযাপন করে আসছেন। এবার ওই এলাকার মানুষজনকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠালো কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে পরিবারগুলিকে কলকাতার আলিপুরের অফিসে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে জেলায়। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। যদিও রাজ্যের শাসক দল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, "গত কয়েক দশক ধরে আমরা বসবাস করছি। স্বাধীনতার আগে খাজনা দেওয়ার রশিদ রয়েছে। আমরা নিজেদের জায়গা কেন ছাড়বো?" তবে উচ্ছেদ করতে এলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান কৌশিক হাজরা বলেন, ২০১৩ সালে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে জমি বিনিময়ের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। রাজ্য নিজেদের খাস জমি কেন্দ্রকে দিয়ে কেন্দ্রের এই জমি নিজেদের নামে করতে আগ্রহী হয়েছিল। তারপরেই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ফাইল চাপা পড়ে যায়।" বিষয় যাই থাকুক ওই ৪০০০ পরিবার উচ্ছেদ হলে কোথায় যাবে? বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসক দপ্তরে হাজির হল জন অধিকার সুরক্ষা কমিটি। জেলা শাসকের দফতরে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। উপস্থিত ছিলেন, বঙ্কিম মুর্মু, লালু হাঁসদা, শংকর সরেন। কমিটির বক্তব্য, "এই উচ্ছেদের নোটিশ হাজার হাজার পরিবারের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের থেকেও নিষ্ঠুর এবং নির্মম। এলাকায় অত্যন্ত আতঙ্ক ও বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছিল অতীতে ব্রিটিশ আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে এরোড্রাম করার নাম করে তদানীন্তন বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী সরকার এই এলাকার মানুষকে একবার উচ্ছেদ করে দিয়ে সর্বশান্ত করেছিল। কত মানুষ তখন অনাহারে অসুখে-বিশুকে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে মারা পড়েছে। তার কোন হদিস কেউ জানে না। ব্রিটিশ বিতাড়িত হওয়ার পর পুনরায় ওই এলাকায় বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে আবার বাঁশ খড় জোগাড় করে কোন প্রকারে মানুষ বসতি স্থাপন করে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে এদেশের ক্ষমতাসীন সরকার আবার এই নর হত্যার খড়্গ নামিয়ে আনলো। এই সরকারের বর্তমান ঘোষণা কার্যত ব্রিটিশ স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাসন ও অত্যাচারকেই ফিরিয়ে আনছে। অথচ স্বাধীন দেশে সরকার গঠনে এমএলএ, এমপি, মন্ত্রিসভা গঠনে নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালন করে এসেছে ওই মানুষগুলো। তাহলে তাদের কি বেঁচে থাকার সুযোগটুকু নেই? তবে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ এবং উচ্ছেদ যাতে না হয় তা জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে জন অধিকার সুরক্ষা কমিটি।