বাংলাদেশে বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হল দুর্গোৎসব

author-image
Harmeet
New Update
বাংলাদেশে বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হল দুর্গোৎসব

হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ঢাকা-সহ সারা বাংলাদেশে বুধবার বিজয়া দশমীর উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দুর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বুধবার শেষ হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাট ওয়াইজ ঘাটে ভিড় করেছেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। এ সময় নানা ধর্মের, শ্রেণী ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এর আগে চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। পরে চার দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপি পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনায় ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।


বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় শারদীয় দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঢাকার বঙ্গভবনে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন জানান, শারদীয় অনুষ্ঠানটি বুধবার সন্ধ্যা ৮টায় সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অতিথিরা। এরআগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি ফের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, “কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না। পক্ষকাল বিদেশে সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরে বিকেলে ঢাকার গণভবন থেকে ভারচুয়ালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালিরা সবসময় সব ধর্মের অনুষ্ঠান উৎসবে শামিল হয়। আমরা কিন্তু প্রতি উৎসবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উৎসব উদযাপন করি। যে কারণে বলি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার। বাংলাদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি মণ্ডপে বুধবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দশমীবিহিত পুজো শেষে ভক্তরা অঞ্জলী প্রদান করেন। এরপর গৃহবধূরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। সর্বত্র বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।


বিসর্জনের উদ্দেশ্যে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয় বিকেল ৪টায়। এর আগে ঢাকায় ২৪১টি পুজোমণ্ডপের অধিকাংশই এসে সমবেত হন পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পুজো-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয়ার শোভাযাত্রা। সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে উমাদেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃণ্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে বুধবার ফিরে গেছেন কৈলাস শিখরে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ বিজয়া দশমী উপলক্ষে বুধবার ছিলো সরকারি ছুটি। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বঙ্গভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। মহানবমীর দিনও আগের দিনের মতো ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছিল। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেছেন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও কোথাও মণ্ডপসংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল থেকেই। এ কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা অবধি বিদ্যুৎহীন ঢাকায় যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যাওয়ায় পূজারিদের পড়তে হয় ভোগান্তির মধ্যে। 

ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী, রমনা, বনানী, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন মন্দিরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জেনারেটর সচল রাখা হয়। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলেও তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৪১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।