New Update
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রামঃ দেবীপক্ষের আগেই মা দুর্গার বোধন হয় ঝাড়গ্রামের রাজার পুজোয়। চারশো বছর ধরে চলে আসছে এই প্রথা। সেই জৌলুস আর নেই বটে, তবে ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজ পরিবারের দেবী পুজোর নির্ঘন্টের পরিবর্তন হয়নি। মহালয়ার কয়েক দিন আগে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে মঙ্গলঘট স্থাপন করে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস শুরু হয়ে যায় পিতৃপক্ষে। পুরনো আমলে রাজার গড় ঝাড়গ্রাম হল এখনকার অরণ্যশহরের পুরনো ঝাড়গ্রাম এলাকা। এখানেই রয়েছে রাজ বংশের কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দির।
মন্দিরের ভিতরে পৃথক চণ্ডীমণ্ডপে দুর্গাপুজোটি হয় পটে। আগে প্রাচীন পটটি ছিল শালপাতার ঝালরের উপর আঁকা। কয়েক শতাব্দী আগে প্রাচীন পটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন চণ্ডীমণ্ডপের দেওয়ালে চিত্রিত পটে দেবীর পুজো হয়। দেবীর নাম পটেশ্বরী। কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে শুরু হচ্ছে পুজো। চলবে বিজয়া দশমী পর্যন্ত।
রাজ পরিবারের পুরনো দস্তাবেজ অনুযায়ী, ১০১৬ বঙ্গাব্দে মল্লদেব বংশের আদিপুরুষ রাজা সর্বেশ্বর এই পুজোর সূচনা করেন। সেই হিসেব অনুযায়ী, এবার এই পুজোর ৪০৮তম বর্ষ। পটে পুজো হওয়ার কারণ নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে রাজ পরিবারের উত্তরসূরি জয়দেব মল্লদেব বলেন, “কুলদেবী সাবিত্রীর নিত্য পুজো হয় দুর্গামন্ত্রে। রাজ বংশের কুলদেবী থাকায় দুর্গাপুজো হয় পটে।” মল্লদেব বংশের কুলদেবী সাবিত্রীর কোনও মূর্তি নেই। মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবীর একগুচ্ছ কেশরাশিকে পুজো করা হয়। সম্ভবত, সেই কারণেই দুর্গাপুজোটিও হয় পটে।”
কেন দেবীপক্ষের আগে পুজো শুরু হয় তা নিয়েও নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কয়েকশো বছর আগে গড় ঝাড়গ্রামের স্থানীয় জংলি মাল রাজাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাস্ত করে রাজ্যপাট দখল করেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর। তাঁর রাজ্যাভিষেকের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রাভিষেক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জনশ্রুতি, সেই উৎসবের রেশ ধরেই আশ্বিন মাসের জীতাষ্টমী তিথিতে রাজ পরিবারের সমৃদ্ধি ও প্রজাদের মঙ্গলকামনায় রাজবাড়িতে জীমূতবাহন অর্থাৎ ইন্দ্রের পুজো হয়। এর পাশাপাশি, শক্তিলাভের কামনায় জীতাষ্টমীর পর দিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্র পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়।”সম্ভবত রাজার ক্ষাত্রতেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই অকাল বোধন বলা চলে।”
রাজ পরিবারের উত্তরসূরি জয়দীপ বাবু আরো জানান, জীতাষ্টমীর রাতে রাজবাড়ি থেকে মঙ্গলঘট আসে চণ্ডীমণ্ডপে। পরদিন, কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে রাজ পরিবারের একটি প্রাচীন খড়্গকে এনে শুরু হয় অস্ত্র পুজো। কথিত আছে, ওই খড়্গ দিয়ে বর্গি হামলা ঠেকিয়েছিলেন সর্বেশ্বরে পুত্র রাজা বিক্রম মল্ল উগাল ষণ্ডদেব। রাজ পুরোহিত পার্থসারথি ঘোষাল বলেন, “রাজ পরিবারের কুলাচার অনুযায়ী, এ দিন থেকে দেবীর নবমাদি কল্পারম্ভ এবং অধিবাস শুরু হয়। বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দেবীর ষোড়শোপচারে পুজো ও চণ্ডী-হোম হয়। রাজ পরিবারের এই দুর্গাপুজোটি ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো। তবে পুজোর অতীত ইতিহাস আজ আর কারোরই তেমন জানা নেই।”
ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে। অতীতের সাক্ষী হয়ে প্রতি বছর পূজিতা হন পটেশ্বরী।
west bengal
bengal
jhargram
durga puja
rajbari
Devi Durga
Durga Puja 2022
Sabitri
Malladeb
Jhargram Rajbari