বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হনুমান,পশু চিকিৎসালয়ের দ্বারস্থ একদল যুবক

author-image
Harmeet
New Update
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হনুমান,পশু চিকিৎসালয়ের দ্বারস্থ একদল যুবক


দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত প্রায় হনুমানকে বাঁচাতে তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পশু চিকিৎসালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরলো একদল যুবক। তাওশেষ রক্ষা হল না, মৃত্যু হল হনুমানের। অগত্যা বনদফতরকে খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিতে হল মৃত হনুমানটিকে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও হনুমানকে বাঁচাতে না পারায় চরম আক্ষেপ যুবকদের। মনে কষ্ট নিয়ে ফিরতে হল বাড়ি।যেখানে মানুষ মানুষকেই অনেকাংশ অবহেলা করে, চোখের সামনে কাউকে পড়ে থাকতে দেখেও নজর এড়িয়ে চলে যায়, সেখানে একটি বন্য প্রাণীর প্রাণ বাঁচাতে নজির সৃষ্টি করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড রঘুনাথপুর এলাকার একদল যুবক।


জানা যায়, রঘুনাথপুর এলাকায় একটি মন্দিরের ছাদে চার পাঁচটি হনুমান লাফ ঝাঁপ করছিল। মন্দিরের পাশেই ছিল একটি বসতবাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য লোহার খুঁটি বা অ্যাঙ্গেল। মন্দিরের ছাদ থেকে একটি হনুমান পাশের বাড়ির ওই বিদ্যুতের খুঁটি ধরে নামতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে ছিঁটকে পড়ে। তা নজরে আসে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দুরে থাকা কিছু দোকানদারের।তারা চিৎকার চেঁচামেচি করলে স্থানীয় জনা সাতেক যুবক দৌঁড়ে এসে দেখে একটি হনুমান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তখনও তার প্রাণ ছিল। বিলম্ব না করে ওই যুবকেরা টোটো গাড়ি ডেকে তাতে জখম হনুমানকে তুলে সোজা চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল রওনা হয়, সেখানে হনুমানকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা তাদের এক্তিয়ারে নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসক হনুমানকে মৃত বলেও জানিয়ে দেন। হাল না ছেড়ে তারা হনুমানটিকে চন্দ্রকোনা ২ নং ব্লক প্রাণী সম্পদ কার্য্যালয় তথা ব্লকের পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যায়।সোজা পশু চিকিৎসালয়ের চেম্বারের দোরগোড়ায় হনুমানকে শুইয়ে রেখে যুবকদের কাতর আরজি, 'কিছু একটা করুন।' পশু চিকিৎসালয়ে হনুমানকে রেখে তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায় তারা।যদিও পশু চিকিৎসালয়ের চিকিৎসকও যুবকদের জানিয়ে দেয় হনুমানটি মারা গিয়েছে। তবে মৃত হনুমানের হেফাজত বা দায়িত্ব তাদের এক্তিয়ারেও নেই।পশু চিকিৎসালয়ের তরফে ওই যুবকদের জানানো হয়, বনদফতরে জানাতে,তারাই এই হনুমানকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত সহ পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। মৃত জেনেও তাকে ফেলে বা ছেড়ে না দিয়ে ঘাটাল রেঞ্জের রেঞ্জার সহ দাসপুর সুলতাননগর বিট অফিসে যোগাযোগ করে ওই যুবকেরা অন্যর সাহায্য। বনদফতরের তরফে ওই যুবকদের এহেন কাজের প্রশংসা করে জানানো হয় তারা কর্মী পাঠিয়ে পশু চিকিৎসালয় থেকে মৃত হনুমানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে, এমনটাই জানানওই যুবকেরা।তাদেরই একজন জগন্নাথ স্বর্ণকারের কথায়, 'বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হওয়ার পর গরম দুধ খাওয়ানো থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে,এমনকি হাসপাতাল,পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো গেল না হনুমানটিকে, মনে আক্ষেপ রয়ে গেল।' একটি হনুমানকে বাঁচাতে এতো প্রাণপণ চেষ্টা বা দৌঁড় ঝাঁপ কেন? উত্তরে তারা জানায়, 'হনুমান মানুষের মতোই, তাদেরও প্রাণ রয়েছে।শুধু হনুমান কেনো যেকোনো প্রাণী হলেও আমরা এভাবেই ছুটে যেতাম।' হনুমানের প্রাণ বাঁচাতে না পারলেও তাকে বাঁচাতে গিয়ে যে মানবিকতার নজির সৃষ্টি করল চন্দ্রকোনা রঘুনাথপুরের এই যুবকেরা, তার প্রশংসায় সকলেই।