সুমিত ঘোষ, মালদাঃ দেবী দুর্গা পূজিত হন আদিবাসী মন্ত্রে। আদিবাসীদের রীতি রেওয়াজে। আর দেবীর আরাধনাতে মেতে ওঠেন আদিবাসী সম্প্রদায়। । মালদা জেলার হবিবপুর থানা এলাকার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কেন্দপুকুর ভাঙাদিঘীতে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন আদিবাসীরাই। ১৫০ বছরের পুরোনো এই পুজো। এই পুজোর প্রচলন করেছিলন লব হাঁসদা। দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেছিলেন পুজো। তখন বাংলাদেশের নাচোল থানার হাকরোল গ্রামে থাকতেন লব হাঁসদা। ঘট পুজোর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল পুজো। পরবর্তীকালে দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন। বসবাস শুরু করেন এই রাজ্যে হবিবপুর থানার কেন্দপুকুরের ভাঙাদিঘী গ্রামে। কিন্তু দেবী দুর্গার আরাধনা বন্ধ করেননি তিনি। লব হাঁসদার প্রচলিত দুর্গাপুজো আজ সার্বজনীন দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে। আদিবাসীরাই আজ এই পুজো পরিচালনা করেন নিজস্ব ঢঙে।
লব হাঁসদার উত্তরসূরি বাবুলাল হাঁসদা জানান, 'তাঁর পরিবারের এই পূজো আজ গ্রামের পুজো। বিগত দিনে ঘট পুজোই হত। সময় বদলেছে গত ২০ বছর ধরে মাটির মূর্তি গড়ে পুজো হয়। কোন ব্রাহ্মণ পুরোহিতকে পুজো করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় না। উচ্চারিত হয় না দেবী দুর্গার প্রচলিত কোনও মন্ত্র। নিয়ম মেনে ষষ্টি,সপ্তমী,অষ্টমী,নবমী ও দশমী হয়। এই চারদিন আদিবাসীদের নিজস্ব মন্ত্রে আদিবাসী ভাষাতেই পুজো করা হয় দেবীকে। চারদিনই নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। নবমীতে খিচুরী ভোগ করা হয়।' গ্রামের এক গৃহবধূ কাবলী মূর্মূ বলেন, 'বাপের বাড়িতে এই পুজো হয় নি কোনদিন। শ্বশুরবাড়িতেই এই পুজোর রেওয়াজ রয়েছে। পূজোর চারদিন নতুন জামা কাপড় পড়ে আনন্দে করি সকলে। দেবীকে পান দিয়ে বরণ করি। ভোগ দি।' এলাকার বাসিন্দা সুনীল সোরেন বলেন এই পূজা এখন গ্রামের পূজা। এই উৎসবে তারাও সামিল হন। আদিবাসীরা নতুন পোশাক কেনে। গ্রামের এক যুবক সুমন হাঁসদা বলেন গ্রামের এই পূজোতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ করা হয়। জমিয়ে আড্ডা হয়।
ভাঙাদিঘী গ্রামে আদিবাসীদের দূর্গার কোন পাকা মন্ডপ নেই। টিনের ছাউনির তলায় বেদী রয়েছে। সেখানেই পুজো হয় দেবী দুর্গার।