দুর্গাপুজোয় গায়ে জড়াবেন নাকি 'অরুনিমা'?

author-image
Harmeet
New Update
দুর্গাপুজোয় গায়ে জড়াবেন নাকি 'অরুনিমা'?


বনমালী ষন্নিগ্রহী, বাঁকুড়াঃ এবার পুজোয় বালুচরীর চমক 'অরুনিমা'। দাম ও আপনার সাধ্যের মধ্যে। বালুচরী নামের মধ্যেই রয়েছে আভিজাত্য,বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ি যেন কথা বলে বালুচরীর শহর বিষ্ণুপুরের আভিজাত্যের। শাড়ির সুতোর টানে আছে নিজস্ব কথন। শিল্পীর হাতের ছোঁয়াতে শাড়ির নকশায় কোথাও ফুটে উঠেছে টেরাকোটার কারুকাজ তো কোথাও মহাভারতের গল্প কোথাও আবার আদিবাসী নৃত্য । বাঙালির শ্রেষ্ঠ পুজোতে শাড়ির সম্ভারে বছরের পর বছর ধরে স্বমহিমায় বিরাজমান হয় বালুচরী ৷ নবাবী এই শাড়িগুলি তৈরি করতে সময় লাগে বেশ। আর শাড়ির দাম? শাড়ির দাম ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। ঐতিহাসিক এই বালুচরী শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ সংলগ্ন বালুচর নামে কোনও এক এলাকায় ৷ অনেক নথি আবার বলছে, জিয়াগঞ্জেরই পূর্বনাম ছিল বালুচর সেই বালুচর নাম থেকেই এসেছে বালুচরী নাম ৷ শিল্পীদের কাছে বালুচরীর বয়ন এক সাধনার মতো ৷ সেই সময় নবাবরা তাঁদের বেগমদের জন্য শাড়ি বানাতেন বালুচরের শিল্পীদের দিয়ে,কালক্রমে গঙ্গাগর্ভে হারিয়ে যায় এই বালুচর প্রদেশ ৷ এরপর কালের নিয়মে হারিয়ে যায় বালুচরী শাড়ি, মাঝে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। দীর্ঘদিন পর এর কিছু নকশা শুভ ঠাকুরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত কারুকার্য শিল্পী অক্ষয়দাস পাঠরাঙার হাতে আসে ৷ তার পর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের পৃষ্টপোষকতায় বালুচরী শিল্পের নবজাগরণ ঘটে।

 সেই আভিজাত্যকে বজায় রেখে পুজোর সম্ভারে আবারো সেজে উঠেছে বালুচরী। প্রতিবছরই পুজোর বালুচরীতে চমক দেন বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত বালুচরী শিল্পী অমিতাভ পাল। এবছরও অভিনবত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান প্রজন্মের বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত বালুচরী শিল্পী অমিতাভ পাল। এবারে তার হাতের তৈরী শাড়ির নাম রেখেছেন অরুনিমা। শাড়িতে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবক্ষয় বন্ধ করার আবেদন করা হয়েছে। পাখিকে খাঁচায় বন্দী,সাপ খেলা দেখানো,গাছ কাটা,বাঁদর খেলা দেখানো এই চারটি সামাজিক কালিমাকে দূর করতে আবেদন জানিয়েছেন শিল্পী। এর পাশাপাশি এই 'অরুনিমা'তে ফুটে উঠেছে বিলুপ্তপ্রায় জীব জন্তু, বাজপাখি,বার্তা প্রেরক পায়রা বা বনের হরিণ। শাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য ২০ হাজার টাকা। সুতোর কাজ যেন সত্যিই কথা বলেছে, একবার সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না আপনি! শিল্পীর নিপুন হাতের স্পর্শে বালুচরী যেন প্রাণ পেয়েছে।

 ইতিমধ্যেই মল্লগড়ের এই বালুচরী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও। এই নবাবী শাড়ির ব্যাপ্তি যদি যাতে আরো সুদীর্ঘ হয় এই আশায় বুক বাঁধছেন শিল্পীরা।