এবার বাংলাদেশেও পি কে হালদারের বিচার শুরু

author-image
Harmeet
New Update
এবার বাংলাদেশেও পি কে হালদারের বিচার শুরু


হাবিবুর রহমান, ঢাকা:
অবৈধভাবে সম্পদ হাতানো মামলায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুই আদালতেই ব্যাংকার পি কে হালদার (প্রশান্ত কুমার হালদার) বিচার চলছে। বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাত কাণ্ডে এবং কানাডায় অর্থপাচারের মামলায় বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামি (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। প্রশান্ত কুমারসহ ওই মামলার আসামি ১৪ জন। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদারসহ তাঁর সহযোগীদের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

 
গ্রেপ্তারের পর কলকাতা আদালতে পি কে হালদার জানান, ‘প্রশান্ত কুমার হালদার, শিব শংকর হালদার ও পি কে হালদার আমি একই ব্যক্তি। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের ৪৪টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হদিস পায় তারা। তারা পি কে এবং তাঁর সহযোগীদের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে পি কে হালদারকে গত ১৪ মে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তারা পি কে হালদারের আরও পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে। এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি। ১৭ মে তাঁদের সবাইকে এই আদালতে তোলে ইডি।আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে পিকে হালদার আছেন ভারতের কারাগারে। তাকেসহ ১০ জনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। বাকি ৯ জন হলেন—পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি। কারাগারে থাকা বাকি চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারি, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। 

বিচারক তাদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। পাশাপাশি সুকুমার ও অনিন্দিতার জামিন আবেদনও নাকচ করা হয় বলে দুদকের আইনজীব মীর আহমেদ আলী সালাম জানান। মামলায় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ঠিক করেছেন আদালত। এই মামলায় গত জানুয়ারিতে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। দুদক বলেছে, দেশের দক্ষিণ জনপদ পিরোজপুর জেলার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পি কে হালদার মাত্র ১০ বছরের (২০০৯-২০১৯ সাল) ব্যবধানে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। তার বৈধ আয়ের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি টাকা। দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো—ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন পি কে হালদার। এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। আর পি কে হালদার দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। পি কে হালদার এখন পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে আছেন। তাকে হস্তান্তরের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। পি কে হালদার পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন। বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৮০ কোটি টাকা।