হাবিবুর রহমান, ঢাকাঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে অভিন্ন নদীর জলবণ্টনে সহযোগিতা, ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ানো, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। গত এক দশকে এ দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কের ‘বিশেষ মাত্রা’ বজায় রেখে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারীক এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে আসছেন। পরদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন। দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে দুই দেশের সহযোগিতার প্রসঙ্গগুলো আসতে পারে। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের একে অন্যকে প্রয়োজন। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি বাংলাদেশ তুলবে। এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করবে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক কালে মার্কিন-চিন বলয়ের প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠতে পারে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাণিজ্য, জ্বালানি, পানিবণ্টন সংযুক্তি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে।অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ‘সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা)’ সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য দুই দেশ চুক্তি শুরুর বিষয়ে আলোচনা করতে চায়। ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, পাট রপ্তানির ওপর ভারতের আরোপিত ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক অপসারণের প্রসঙ্গগুলো তুলবে ঢাকা, এমনটা আভাস দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রক। বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত ডিজেল রপ্তানি করতে চায় ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারের শীর্ষ বৈঠকেও তিস্তার বিষয়টি বাংলাদেশ তুলবে। এর পাশাপাশি ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমারের জলবণ্টনের রূপরেখা নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি তুলবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া গঙ্গার জল সদ্ব্যবহারে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষার ঘোষণা আসতে পারে শীর্ষ বৈঠক শেষে।
ভারত ২০০৬ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় বৃত্তি দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয়দের সম্মান জানাতে মুজিব স্কলারশিপ ফর ওয়ার ভেটারেনস ফ্যামিলি নামের বৃত্তি চালুর ঘোষণা দেবেন। ৭ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েকজনের হাতে এ বৃত্তি তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের একজন জ্যেষ্ঠেআধিকারীক জানান, শুরুতে এ কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ১০০ এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১০০ করে মোট ২০০ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি দেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে এককালীন ৫০০ এবং ১ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে। টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুরস্কৃত করবে দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (টেরি)। সাবেক টাটা এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এখন টেরি নামে পরিচালিত হচ্ছে।