পরিত্যক্ত কোয়ার্টারকে দখল করতে ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ বনাম ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুলের লড়াই প্রকাশ্যে

author-image
Harmeet
New Update
পরিত্যক্ত কোয়ার্টারকে দখল করতে ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ বনাম ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুলের লড়াই প্রকাশ্যে

মেদিনীপুর: পরিত্যক্ত একটি আবাসনের মালিকানা দখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ালো মেদিনীপুর শহরের ২ ঐতিহ্যবাহী দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের লড়াইয়ে সামিল হতে এসে জখম ছাত্ররা ভর্তি হাসপাতালে। বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে ছাত্ররা। সামাল দিতে ছোটে পুলিশ। মেদিনীপুর শহরে মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুল পাশাপাশি তৈরি। কলেজিয়েট স্কুলের পেছনে একটি পুরনো কোয়ার্টার রয়েছে। যেখানে শেষবার মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ থাকতেন। এই কোয়ার্টারে একটা সময় থাকতেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু। যিনি মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে এই কোয়ার্টারে মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষগণ থাকতেন। কয়েকবছর ধরে এই কোয়ার্টারটি নিজেদের দাবি করে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল ও মেদিনীপুর কলেজ। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল তৈরি হয়। এই কোয়ার্টারের দখল নিয়ে আদালতে মামলা হয়। আদালতের তরফে কোয়ার্টারের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ রয়েছে। এরই মাঝে মঙ্গলবার সকালে অপরিচ্ছন্ন ওই কোয়ার্টারটি পরিচ্ছন্ন করতে প্রবেশ করে মেদিনীপুর কলেজের এনএসএস ইউনিট। আদালতের স্থিতাবস্থা জারি রাখার সময় এই কাজ করতে ঢোকায় প্রতিবাদ করে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল। কলেজের অধ্যাপকদের সঙ্গে কলেজের ছাত্ররা প্রতিবাদে সামিল হয়। অন্যদিকে কলেজিয়েট স্কুলের সঙ্গে স্কুলের ছাত্ররা হাজির হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এতে জখম হয় কলেজিয়েট স্কুলের জুনিয়র ছাত্ররা। প্রতিবাদে স্কুলের সামনে শহরের প্রধান রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে স্কুলের ছাত্ররা। উত্তেজনা সামাল দিতে ছুটে আসতে হয় কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের সবথেকে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় হল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল। যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ঋষি রাজনারায়ণ বসু। এই স্কুলের ছাত্র বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন অস্ত্রগুরু হেমচন্দ্র কানুনগো। হেরিটেজ এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিপ্লবীরা জড়িত। এই স্কুলের পাশেই তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর কলেজ। কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রতন কুমার মান্না বলেন-" ঐতিহাসিক এই স্কুলের সঙ্গে বিভিন্ন বিপ্লবীদের মর্যাদা জড়িত। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঋষি রাজনারায়ণ বসু থাকতেন ওই কোয়াটারটিতে। পরবর্তীকালে আমাদের এই স্কুলের নামের কারণেই পাশে তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না বলে আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের স্কুলের রাজনারায়ণ বসুর কোয়ার্টারে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। এখন সেই স্থানটাই ওরা দখল করতে চাইছে। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ওরা গায়ের জোর দেখিয়ে দখল করতে চাইছে। কলেজের ছাত্ররা এসে আমাদের ছোট ছোট ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে৷ কয়েকজন জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।" অন্যদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র সৌরভ দত্ত বলেন-" কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররাই আমাদের এবং আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে। ওরাই আবার অবরোধ বিক্ষোভ করছে।"   মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর জিসি বেরা বলেন-" আদালতের রায় আমাদের পক্ষেই রয়েছে। অপরিচ্ছন্ন থাকা ওই কোয়াটারটি পরিষ্কার করতে গিয়েছিল কলেজের এনএসএস এর ছাত্ররা। ওখানকার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক তাদের বাধা দিয়ে গন্ডগোল করেছে।" তবে জেলার তথা রাজ্যের নামকরা ঐতিহ্যবাহী বিপ্লবীদের স্মৃতি বিজড়িত বিদ্যালয়ের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী কলেজের এই গণ্ডগোল রাস্তায় চলে আসায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের গণ্ডগোলের মাঝে দুই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ঢুকে পড়া এবং রাস্তায় অবরোধ করা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে মেদিনীপুরে। বিকেলে দুই কতৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন মেদিনীপুর পৌরসভা প্রধান ও মহকুমা শাসক৷ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এছাড়াও ছাড়াও পুলিশ আধিকারিকরা৷ মেদিনীপুর পৌরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন " দুই পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে ৷ আদালত সুনির্দিষ্ট রায় না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে কেউই প্রবেশ করবেনা ৷ তালা বন্ধ থাকবে সেখানে”৷