দল চালাতে পার্টি অফিস ভাড়া দিল সিপিআই!

author-image
Harmeet
New Update
দল চালাতে পার্টি অফিস ভাড়া দিল সিপিআই!

নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর :অর্থনৈতিক সংকট! দল চালাতে CPI জেলা অফিস ভাড়া দিল ছাত্রীনিবাস সহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে।শোচনীয় অবস্থা বাম শরিক সিপিআই এর। দল ও সংগঠন চালাতে অবশেষে নিজেদের জেলা পার্টি অফিসকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিল এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। আর তা ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরে।



প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, এই বাংলায় দীর্ঘ ৭৭ সাল থেকে একচ্ছত্র অধিকার দখল করে রেখেছিল বাম নেতৃত্ব। একসময় বাম নেতাদের মঞ্চে বলতে দেখা যায়, 'ওরা শূন্য আমরা ১০০ তে ১০০'। এই সময় বাম ও বাম শরিকদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ ছিল রমরমা। এক ও একাধিক জায়গায় বিলাসবহুল পার্টি অফিস, দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করতে তৈরি করেছিল বামেরা। এরকমই দুটি পার্টি অফিস ১৯৪৫ সালে গড়ে উঠেছিল বাম শরিক সিপিআই এর মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগর সংলগ্ন এলাকায়। এরপর ২০১১ সালে এক মাওবাদী তৎপরতা এবং মানুষের ক্ষোভের সঞ্চারের ফলে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর শোচনীয় ভাবে পরাজয় হয় বামেদের। এরপর বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। এই ক্ষমতা দখলের পর থেকেই একের পর এক পার্টি অফিস বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের ক্ষোভের জন্য বাম নেতাকর্মীরা ঘর ছাড়াও হয়।একাধিক মামলা জরিমানায় বামেদের অবস্থা হয়ে ওঠে শোচনীয়। বামেদের অভিযোগ ছিল প্রথম দু-তিন বছর তারা এলাকা ছাড়া ছিলেন এবং বহু পার্টি অফিস জোর করে দখল করেছে তৃণমূল। সেইসঙ্গে কর্মী নেতৃত্বের ঘরবাড়ি দখল করেছে শাসক দল। কিন্তু ২০১৪ লোকসভা এবং ২০১৬ এর বিধানসভার পর থেকে বামেরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে। ২০১৯ এর লোকসভাতেও সেই ভাবে দাপট না দেখাতে পারলেও বামেরা সব জায়গায় প্রার্থী দিয়ে ভোটে লড়াই করে। তারপরও তারা ২০২১ সালে যৌথ মঞ্চ গড়ে তুলে সংযুক্ত মোর্চা থেকে লড়াই করে এবং তাতেও পরাজিত হয়। এই অবস্থায় যেখানে জঙ্গলমহলে এক ডাকে বাম নেতাদের কথায় পুলিশ উঠতো বসতো সেখানে বামেদের অবস্থা হয়ে ওঠে শোচনীয়। এই অবস্থায় বাম শরিকদের অন্যতম সিপিআই তাদের জেলা পার্টি অফিস দল চালাতে ছাত্রী নিবাস ও ডাক্তার চেম্বারের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিল। তিন তালা বিরাট বিলাসবহুল পার্টি অফিস এখন মেয়েদের ছাত্রী নিবাস।আর দফতরের সামনের দিকে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডাক্তারদের জন্য।




যদিও এবিষয়ে CPI এর জেলা সম্পাদক অশোক সেন জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে পার্টির অবস্থা খারাপ। তাছাড়া দুটো পার্টি অফিস রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আগের মতো আর লেভি আদায় হয় না বা সেই পরিমাণে কর্মী সংখ্যা নেই।তাই দুটো পার্টি অফিস চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই দলে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে পার্টি অফিসের অর্ধেক মেয়েদের ছাত্রী নিবাস করার জন্য এবং বাকি অর্ধেক অংশ ভাড়া দেওয়া হয় ডাক্তারদের চেম্বারের জন্য। তাতে যে টাকা উঠে আসবে তাতে আমরা এই পার্টি অফিস সংরক্ষণ দলের কাজকর্ম চালাতে পারবো।' যদিও এই বিষয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে জেলা তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, যে দল একসময় দম্ভের মধ্য দিয়ে সংগঠন চালাতো, আজকে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় দল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাম শরিকদের। এই অবস্থায় বহু কর্মী হারিয়ে, তারা পার্টি অফিস গুলোকে ভাড়ায় দিতে চাইছে। তাই তার আগে থেকেই প্রস্তুতি হিসেবে তারা ভাড়া দিয়েছে পার্টি অফিস গুলি। কথায় আছে মানুষের অহঙ্কার দম্ভ তার পতনের কারণ।