এক হতভাগ্য বৃদ্ধ পিতার কঠিন বাস্তব জীবন কাহিনী

author-image
Harmeet
New Update
এক হতভাগ্য বৃদ্ধ পিতার কঠিন বাস্তব জীবন কাহিনী

হরি ঘোষ, পাণ্ডবেশ্বর : বয়স প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই, এখনো প্রত্যেকদিন শুধুমাত্র খিদের জ্বালায়, পেটের টানে, তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সামান্য ছোট এক থলি কয়লা আার জন্য পরিশ্রম করেন। কোলিয়ারি এলাকা পাণ্ডবেশ্বরের এই প্রৌঢ়ের অক্লান্ত কঠিন পরিশ্রমকে সম্মান জানাতেই কোলিয়ারি নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রত্যেক দিন তাকে ছোট একটা থলিতে কয়লা নিয়ে যেতে বাধা দেন না।   প্রৌঢ় হলেন একসময়ের সুনিপুণ তাঁত শিল্পী। বাঁকুড়ার যুগিরবাঁধ এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্ল দত্ত তন্তুবায়। এক সময় তারা চার ভাই প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন । তাঁতের সুতোর দাম বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয় তাদের তাঁত তৈরির কাজ। তারপর তিনি চলে আসেন তার দাদার কাছে ভাটমুড়া গ্রামে। এখানে এসে শুরু করেন চাষবাস। তার পাশাপাশি দীর্ঘ ১৬ বৎসর তিনি করেছেন রাজমিস্ত্রির কাজ। তিনি জানান যে তার একটি ছেলে ও চারটি মেয়ে রয়েছে বর্তমানে, সকলেই  বিবাহিত । অথচ বুড়ো-বুড়ি থাকেন একসাথেই। বৃদ্ধ প্রফুল্ল বাবু কাঁপা গলায় বলেন যে এই বয়সেও কঠিন পরিশ্রম করতে হয় শুধু খিদের জ্বালায়, ছেলে আছে কিন্তু দেখে না কেউ।


তাকে দেখতে পাওয়া যায় সারা বছর জরাজীর্ণ শরীরে সোয়েটার গায়ে। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে কাতর কণ্ঠে তিনি বলেন , "শরীরে তো সে ক্ষমতা নেই, হাড়গুলি সম্বল। তাই কয়লার থলি পিঠে আনতে প্রচন্ড ব্যথা হয় বাবা, সেই জন্যই সেই ব্যথা কমাতেই সব সময় সোয়েটার পরে থাকি তাতে গরম তো লাগে কিন্তু করার কিছুই নেই"। স্ত্রী করেন পরিচারিকার কাজ । বৃদ্ধ প্রফুল্ল বাবু জানান, ''সরকার ১০০০ টাকা করে ভাতা দেয়, তার সাথে চাল গমও পাই । এভাবে কষ্টেই বুড়ো-বুড়ির দুবেলা জুটে যায় ভাত।''


একজন পিতা তার সন্তানকে লালন পালন করেন বহু কষ্ট সহ্য করে, এই আশায় যে বৃদ্ধ বয়সে তাকে তার ছেলেরা দেখাশোনা করবে, সেবা সুশ্রূষা করবে। কিন্তু বর্তমান সমাজে এরকমটা ভাগ্যে জোটে কজনের? নইলে আমাদের দেশে এত বৃদ্ধাশ্রম হতো না । তবে এত কষ্ট সহ্য করেও একসময়ের প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্পী প্রফুল্লবাবু ভগবানের প্রতি আস্থা হারাননি । প্রত্যেকদিন তিনি সামান্য কয়লার আশায় যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন, সেই পথের মাঝেই পড়ে কয়েকটি দেবতার স্থান । প্রচন্ড কষ্টে হাঁটতে হাঁটতে ভোলেন না দেবতাকে স্মরণ করতে।ধীরে ধীরে বসে পড়েন রাস্তার ওপরেই । মন্দিরের দিকে তাকিয়েই ভক্তিভরে ভগবানকে স্মরণ করেন। মাঝেমধ্যে এরকম এক বৃদ্ধ পিতাকে দেখে ভগবানের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করতে ইচ্ছা হয়। এ কেমন বিচার যে লোকটা এত কষ্টেও তাকে স্মরণ করতে ভোলেন না, তার প্রতি কি ভগবানের কোনদিনই কৃপা দৃষ্টি পড়বে না ?