শালবনীর ঐতিহ্যবাহী জরা-জীর্ণ মন্দিরের ইতি কথা!

author-image
Harmeet
New Update
শালবনীর ঐতিহ্যবাহী জরা-জীর্ণ মন্দিরের ইতি কথা!

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ  অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার শালবনীর টুরাপাড়া গ্রামের একটি প্রাচীন জমিদার বংশের দুর্গা মন্দির নিয়ে এবারের জার্ণাল। শুধু মেদিনীপুর জেলা নয় বাংলারও অধিবাসী ছিল না বংশটি। আদিতে এঁরা ছিলেন রাজপুতানা এলাকার শোলাঙ্কি ক্ষত্রিয়। ১৪ শ শতাব্দীতে দিল্লীর শাসক আলাউদ্দিন খিলজীর বারংবার সৌরাষ্ট্র-রাজপুতানা ইত্যাদি এলাকা আক্রমণের সময়, ধন, প্রাণ এবং স্বধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে, বহু শোলাঙ্কি রাজপুত পরিবার, তীর্থদর্শনের অজুহাতে, দেশত্যাগী হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁদের কয়েকটি অংশ পুরীতে জগন্নাথ দর্শন সেরে, মেদিনীপুর জেলায় ঢুকে পড়েন। 


তাঁদেরই বেশ কিছু শোলাঙ্কি পরিবার, মেদিনীপুর বা খড়গপুর শহর সহ এই জেলার দক্ষিণ এবং পশ্চিম এলাকায় কয়েকশ বছর ধরে, আজও স্থায়ী অধিবাসী হয়ে বসবাস করছেন।

সাড়ে ১২ ফুট চওড়া আর উত্তর-দক্ষিণে ৩৮ ফুটের টানা বিস্তার- এমনই বিশাল এক অলিন্দ। তাতে খিলান-রীতির পাঁচটি উন্মুক্ত দ্বারপথ। দ্বারগুলো রচিত হয়েছে আটটি করে গুচ্ছ থাম বা স্তম্ভের সাহায্যে। অলিন্দের পিছনে একই রীতির থাম আর তিনটি খিলানের দ্বারযুক্ত গর্ভগৃহ। তার ডানদিক আর বামদিকে দুটি পৃথক কক্ষ। সেবা পুজোর কাজের জন্য। 




 নাটমন্দির, অলিন্দ এবং গর্ভগৃহ- সবগুলোরই সিলিং হয়েছে কড়ি আর বরগায়। সে কারণে, মন্দিরের কার্ণিশটি সরলরৈখিক। সামনের দেওয়ালে পাঁচটি খিলানের মাথা বরাবর আলসের উপর একটি করে অনুচ্চ স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের শীর্ষক বা চুড়াটি নির্মিত হয়েছিল মাঝখানের কেন্দ্রীয় স্তম্ভের উপর। দু’দিকে ব্যাদিত-বদন দুটি সিংহমূর্তি। কিন্তু মূল শীর্ষকটি এতখানিই জীর্ণ যে, কেবল বেঁকি এবং আমলকটি ছাড়া উপরের অংশ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট নেই  


কেবল গর্ভগৃহ আর অলিন্দটিই প্রশস্ত আকারে নির্মিত হয়নি। সামনে প্রকাণ্ড একটি নাটমন্দিরও গড়া হয়েছিল। যার তুলনা সারা মেদিনীপুর জেলার ৮০০ থেকে ১,০০০ প্রাচীন মন্দিরের কোথাও নেই। অন্য কোনও জেলায় আছে কিনা, অভিজ্ঞ সমীক্ষকেরাই আলোকপাত করতে পারবেন। ৪১ ফুট দৈর্ঘ্য আর সাড়ে ৩৯ ফুট প্রস্থ সেই নাটমন্দিরের মোট ৪ সারি স্তম্ভ। অর্থাৎ নাটমন্দিরের অভ্যন্তরে ডানদিকে এবং বামদিকেও দু’সারি করে অতিরক্ত স্তম্ভের সমাবেশ হয়েছে।


তিন দিকেই পাঁচটি করে খিলানের দ্বার আছে। মন্দিরটিতে মোট ৩৬টি স্তম্ভ- ৩২টি পূর্ণ-স্তম্ভ (পিলার) এবং ৪টি অর্ধ-স্তম্ভ (পিলাস্টার)। স্তম্ভগুলোর গড়ন সম্পর্কেও সামান্য আলোকপাত করা যেতে পারে। নাটমন্দিরের বহির্ভাগে ১৬টি একক স্তম্ভ। অভ্যন্তরের স্তম্ভগুলো ৪টি করে স্তম্ভের গুচ্ছ। কিন্তু সকলের চোখের সামনেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে একটি মূল্যবান হেরিটেজ মনুমেন্ট।