অবশেষে চালু হল পদ্মা সেতু, দেখুন ভিডিও

author-image
Harmeet
New Update
অবশেষে চালু হল পদ্মা সেতু, দেখুন ভিডিও

হাবিবুর রহমান, ঢাকাঃ  অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেদিনের অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া কেন্দ্র করে প্রমত্তা পদ্মার দুই পারে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। এই মাহেন্দ্রক্ষণে যুক্ত হলেন ‘পদ্মাকন্যা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বেলা ১২টায় পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে শনিবার বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে টোল দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল ২-এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। সেখানেও মোনাজাতে যোগ দেন তিনি। এর পর মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় জাজিরা পয়েন্ট থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামিকাল রবিবার ভোর ৬টা থেকে জনসাধারণের জন্য যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ওইদিন থেকেই সারা বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

 
সাড়ে ৬ বছরের নির্মাণ বুননে পদ্মার দুই পাড় এক করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্পন্ন হওয়া সবচেয়ে বড় এই নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে পুরো নিজস্ব অর্থে। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কোনো ধরনের ঋণ ছাড়াই বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রচিত হলো নতুন এক ইসিহাস। পদ্মার বুকে সেতু গড়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বের কাছে নিজের সক্ষমতা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। পদ্মার স্বপ্ন জয়ের সফল গল্প হাতছানি দিচ্ছে সামনে এমন আরও বড় প্রকল্পে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ার।

 
বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে গোটা দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রত্যাশা, জনপদের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই অঞ্চল। এজন্যই পদ্মা সেতুকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এতো উচ্ছ্বাস। পদ্মার পাড় এলাকাগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। ২০১৫ সনের ১২ই ডিসেম্বর পদ্মার বুকে স্বপ্নমালা গাঁথার কাজটি শুরু হয়েছিল। নির্মাণ করা হয়েছে ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের পদ্মা সেতু। ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে দাঁড়ানো দ্বিতল পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞটি অবশ্য খুব সহজ ছিল না। পদ্মার ঘূর্ণি জলের মতোই বৈচিত্র্যময় এর তলদেশের মাটির পরতে পরতে ছড়িয়ে দিতে হয়েছে বহুমাত্রিক নির্মাণ কৌশল। সেতুর ইতিহাসে পৃথিবীর গভীরতম পাইল বসানো হয়েছে এখানে। এই পাইল নদীর তলদেশে পৌঁছে দিতে ব্যবহার হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমতাধর হ্যামার। আড়াইশ’ মিটার দীর্ঘ তিন হাজার টনের এক একটি স্প্যান খুঁটির ওপর বসাতে ব্যবহার করা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেন। সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি পরামর্শক, প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাঠামো নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ, এপ্রোচ সড়ক ও নদী শাসন মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।