দ্বিগবিজয় মাহালী-গ্রামে এখনও ফোনের নেটওয়ার্ক মেলে না। অনলাইনে ক্লাসের জন্য যেতে হতো দু'কিলোমিটার দূরে। ওইভাবে পড়াশোনা করে তাক লাগালো জঙ্গলমহলের সোহম মাহাত। বাড়ি মেদিনীপুর সদরের চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢড়রাশোলে। বাবা গ্রাম্য এলাকার ফুটবলের রেফারি। রয়েছে সামান্য এক ফসলি কৃষি জমি। কোনো রকমে দিন চলে। সেভাবে প্রাইভেট টিউটর ছিল না সোহমের। স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে পড়ত। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাকে। অনলাইনেও ক্লাস করার ক্ষেত্রে বাধা নেটওয়ার্ক। তার সত্ত্বেও সফল সোহমের স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া। চাঁদড়া হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে ৪৭০ নম্বর পেয়ে সফল হয়েছে সে। তার বিষয় ভিত্তিক নম্বর বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯২, ভূগোলে ৯৩, নিউট্রেশনে ৯৪, দর্শনে ৯৯। এই সাফল্যে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদানকেই প্রাধান্য দিচ্ছে সোহম। সোহম বলে, "করোনা কালে স্কুল বন্ধ থাকার জন্য পড়াশনার ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। সেভাবে টিউশন নিতে পারিনি। গ্রামে নেটওয়ার্ক না থাকায় অনলাইনে ক্লাস করতে যেতে হত দু'কিলোমিটার দূরে চাঁদড়াতে। তবে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে বাংলার শিক্ষিকা অন্তরা ঘোষ ম্যাডাম পড়াশোনায় বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে স্কুল হলে আরও কিছু নম্বর হয়তো বেশি পেতাম।" সে বলে, "আমার ইচ্ছে শিক্ষক হওয়া। পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে ওঠার ইচ্ছাও রয়েছে।" বাবা ফুটবলের রেফারি। আবার ওই গ্রামের ফুটবলার পিন্টু মাহাত মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল সহ বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। পিন্টু এখন ভারতীয় নৌবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন। যার ফলে সোহমেরও ইচ্ছা ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু ওই এলাকায় নেই কোনো ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। সোহমের বাবা মিন্টুলাল মাহাত বলেন, ‘পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ছেলেকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়নি। তার ইচ্ছাকে সাহায্য করি।’ চাঁদড়া হাইস্কুলের শিক্ষিকা অন্তরা ঘোষ বলেন, সোহম খুবই মেধাবী। একেবারে দরিদ্র সাধারণ পরিবারে জন্ম। পড়াশোনায় স্কুলের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করি। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল পাগলও। স্কুলে অনেক পুরস্কার এসেছে ওর হাত ধরে।"