দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : পথ দুর্ঘটনার জেরে রক্তক্ষরণে বাবার মৃত্যু। ১৮ বছর ধরে বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন মেয়ের।
১৮ বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বিবেকানন্দের। ১৮ বছর ধরে মৃতের স্মৃতির উদ্দেশ্যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছে পরিবারের সদস্যরা। জানা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের বাঁকা এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ করন। ১৮ বছর আগে ২০০৫ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। তখন একমাত্র কন্যার বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিবেকানন্দ বাবু নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। বিবেকানন্দ বাবু ছিলেন রক্তদান আন্দোলনের একজন কর্মী। এলাকার মানুষের প্রয়োজনে রক্ত থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। গত ২০০৫ সালে পথ দুর্ঘটনায় বিবেকানন্দ মারা যায়। রক্তদান আন্দোলনের কর্মী রক্তক্ষরণে মারা যায়। তার পর ২০০৬ সালে এলাকার একটি জনপ্রিয় রক্তদান আন্দোলনের সংগঠন ভাবনায় করন ভবনে আত্মীয় বন্ধু শুভার্থীদের নিয়ে রক্তদানের শিবির শুরু হয়। বিবেকানন্দ করনের বাড়িতে। সোমদত্তা ৪ বছর বয়স থেকেই বাবার মৃত্যু দিনের শিবির উদ্বোধন করে আসছে। বর্তমানের সোমদত্তা কলেজ ছাত্রী। সোমদত্তা ১৮-র গণ্ডি পেরিয়ে বাবার রক্তদান শিবিরের দায়িত্ব নিয়েছে, পাশে পেয়েছে কাকু ও মাকে। ২৯শে মে অর্থাৎ রবিবার বিবেকানন্দ করনের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। এদিন রক্তদান শিবিরে ৪৫ জন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা রক্ত দান করেন। এলাকার বিশিষ্টজনেরা এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত হয়েছিলেন চন্দ্রকোনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি সূর্যকান্ত দোলুই, ক্ষীরপাই টিওপির আইসি প্রশান্ত কীর্তনীয়া, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী। সোমদত্তা বলেন, 'বাবার যখন মৃত্যু হয়েছিল আমার বয়স ছিল তিন বছর। তখন সেভাবে আমার বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু প্রতিবছর বাবার মৃত্যু দিনে শিবিরে আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থেকেছি। দেখতাম অনেকেই বাবাকে নিয়ে প্রশংসা করত। তাই এরকম একটি দুঃখের দিনে বাবা যেহেতু পরোপকারী ছিল আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এই শিবির চালিয়ে যাব।' ক্ষীরপাই নবারুনের সম্পাদক বলেন, 'বিবেকানন্দ করন আমাদের সংগঠনের সভাপতি থাকাকালীন পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমরা তাই ঠিক করেছিলাম তিনি যেহেতু আমাদের রক্তদান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন রক্তদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাবো। তাই ২০০৬ সাল থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে আত্মীয় বন্ধুদের নিয়ে এই শিবির সংগঠিত হচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে এই ধরনের শিবির পশ্চিমবঙ্গের প্রথম। এই শিবিরের প্রথমদিকে দায়িত্বভার তুলে নিয়েছিলেন বিবেকানন্দ স্ত্রী চন্দনা। পরবর্তীকালে তার মেয়ে ও কাকা এই শিবির পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছেন।'/)